অমরাবতী (অন্ধ্রপ্রদেশ): অন্ধ্রপ্রদেশের 'ন্যায়সঙ্গত' দাবি, অধিকার অর্জনের জন্য তিনি 'ধর্মযুদ্ধে' নেমেছেন। বললেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তাঁর দল তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) আজই কেন্দ্রের এনডিএ ও জোটের সরকার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে, অন্ধ্রকে স্পেশাল ক্যাটাগরির মর্যাদা দেওয়ার ইস্যুতে টিডিপি নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিশও দিয়েছে। তাঁর দাবি, জাতীয় রাজনীতির অনেক দল টিডিপি-র বিশ্বাসযোগ্যতাকে সম্মান করে সেই অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থনও করছে। তিনি এবার জাতীয় স্তরে নানা দলকে একজোট করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন।
টিডিপি সুপ্রিমো জানান, তিনি এখনও কোনও দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে 'টিডিপির বিশ্বাসযোগ্যতা' তৈরি হয়েছে, যাকে গুরুত্ব দিয়ে অন্য দলগুলি তাদের অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করছে। বলেন, আমি ধর্মযুদ্ধে নেমেছি। যারা আমাদের সমর্থনে রাজি, তাদের সঙ্গে শীঘ্রই কথা বলব।
নাইডু বলেন, এখন তিনি যে কোনও দলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, যা কেন্দ্রের শাসক জোটের শরিক হওয়ার ফলে এতদিন করতে পারছিলেন না। এখন আমার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। বিভিন্ন দলকে জাতীয় রাজনীতিতে একজোট করতে এগিয়ে চলব।
২০১৪ সালের অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন ও সে সময় রাজ্যসভায় তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দেওয়া যাবতীয় প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে, এই দাবিতেই টিডিপি আজ লোকসভায় কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে।
এদিন চন্দ্রবাবু নাম না করে খোঁচা দেন রাজ্যে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াইএসআর কংগ্রেসকেও। তারাও গতকালই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। চন্দ্রবাবু বলেন, আমরা নৈতিক মূল্যবোধের তাড়নাতেই এনডিএ ছাড়লাম। তারপরই অনাস্থা প্রস্তাব আনলাম। যাদের কোনও নৈতিক আদর্শ বোধ নেই, তারাই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশে ঘুরঘুর করছে। টিডিপি যে দলের কোনও নৈতিক মূল্যবোধ নেই, তাদের পেশ করা প্রস্তাব সমর্থনের পরিবর্তে নিজেরাই প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানান চন্দ্রবাবু।
এদিন অন্ধ্র বিধানসভায় আলোচনার সময় টিডিপির কেন্দ্রের জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, শুধু অন্ধ্র বিভাজনের পর রাজ্যের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এনডিএ-তে ঢুকেছিলাম আমরা। চার বছর শুধু আশাই করে গিয়েছি যে, কেন্দ্র সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে, কিন্তু আমাদের প্রতি শুধু বঞ্চনাই করা হয়েছে।
বিজেপিকেও তীব্র আক্রমণ করে চন্দ্রবাবু বলেন, বিরোধী শিবিরে থাকার সময় ওরা রাজ্যের স্বার্থের খেয়াল রাখবে বলেছিল, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরই ওরা আমাদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করল!
সংসদে যখন তাঁরা রাজ্যের অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একবারও টিডিপি এমপিদের আলোচনায় ডাকার সৌজন্য দেখাননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ২০১৪-র ভোটের আগে অন্ধ্রের জন্য গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিলেন মোদী, রাজ্যের রাজধানীকে নয়াদিল্লির থেকে উন্নত করা সহ অনেক আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেইসব আশ্বাসের কী হল, জানতে চান তিনি।

সমর্থন প্রত্যাহারের পর টিডিপি নেতা সি.এম রমেশ, থোটা নরসিংহ, রবীন্দ্র বাবু এবং অন্যান্য নেতারা দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, বিজেপি মানে 'ব্রেক জনতা প্রমিস'। সোমবার অনাস্থা প্রস্তাব আনবে টিডিপি।




টিডিপি-র সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে বলেন, দেশকে আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্যে এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রয়োজন ছিল। আগামী ২৬ মার্চ দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।




প্রসঙ্গত, গত ৮ মার্চ দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি.অশোক গজপতি রাজু এবং ওয়াই.এস চৌধুরী মোদী সরকার ছেড়ে বেরিয়ে যান। কারণ, অন্ধ্রপ্রদেশ রিঅর্গ্যানাইজেশন অ্যাক্ট ২০১৪ নিয়ে  বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। এরপর আজ টিপিডির সমস্ত নেতারা একক ভাবে পার্টি প্রধান এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে  সহমত হয় এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন।