অমৃতসর: ভারত সফররত কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহের বৈঠকে প্রত্যাশিত ভাবেই উঠল খালিস্তান ইস্যু। সপরিবারে ভারত সফরে আসা ট্রুডো স্বর্ণমন্দির ঘুরে দেশভাগের স্মৃতি বিজড়িত মিউজিয়ামে যান ট্রুডো। তারপর স্থানীয় এক হোটেলে অমরিন্দর-ট্রুডোর প্রায় ৪০ মিনিট কথা হয়।

সেখানে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তাঁর দেশকে ঘাঁটি করে সক্রিয় ৯ জনের একটি তালিকা দেন অমরিন্দর, যারা পঞ্জাবে টার্গেট করে খুন করা, নানা ধরনের ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক অপরাধে জড়িত, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালাতে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করছে, অর্থ ঢালছে বলে দাবি করেন তিনি। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে তিনি ট্রুডোকে অনুরোধ করেন। পাল্টা ট্রুডো আশ্বাস দেন, তাঁর দেশ ভারত বা অন্যত্র কোথাও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন সমর্থন করে না। অমরিন্দরের মিডিয়া পরামর্শদাতা রবীন ঠুকরাল সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু গোষ্ঠী, যারা কানাডার জনজীবনে সংখ্যায় খুবই ছোট, যারা এসব করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রুডোর সহযোগিতা চান মুখ্যমন্ত্রী। কুইবেকের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের উল্লেখ করে ট্রুডো তাঁকে বলেন, তিনি সারা জীবন এ ধরনের বিপদের মোকাবিলা করেছেন, হিংসার বিপদ সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি অবহিত।




বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী নিজেও ট্যুইট করেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট আশ্বাস পেয়ে আশ্বস্ত হলাম। তাঁর দেশ কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সমর্থন করে না বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর ঘোষণা ভারতে আমাদের সবার কাছে বড় স্বস্তির ব্যাপার। বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসবাদী লোকজনের মোকাবিলায় তাঁর সরকারের সমর্থনের প্রত্যাশায় রয়েছি আমরা।
উল্লেখ করার ব্যাপার হল, আজ ট্রুডোর সঙ্গে ছিলেন কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হরজিত সজ্জন। বৈঠকে যোগ দেন পঞ্জাবের স্থানীয় প্রশাসন মন্ত্রী নভজ্যোত সিংহ সিন্ধু। গত বছর হরজিত পঞ্জাব সফরে এলে তিনি খালিস্তানিদের প্রতি সহানুভূতিশীল, এই অভিযোগে তাঁর সঙ্গে করমর্দন করতে রাজি হননি অমরিন্দর। তবে আজ হরজিতের সঙ্গে হাত মেলান মুখ্যমন্ত্রী।
পঞ্জাব পুলিশের ধারণা, রাজ্যে টার্গেট করে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলির পিছনে রয়েছে কানাডা, ব্রিটেন, ইতালি সহ বিদেশের মাটিতে সক্রিয় চক্রান্তকারী ও আর্থিক মদতদাতারা।
ঠুকরাল জানান, ট্রুডোকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা সুরক্ষিত, কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী, কট্টরপন্থী ও হিংসা প্রচারকারীরা এ ধরনের যে কোনও অধিকার হারিয়েছে, কারণ পঞ্জাবের জনগণই তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। যারা পৃথক শিখ রাষ্ট্রের পক্ষে সওয়াল করেছে, তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
ট্রুডো তাঁকে যাবতীয় উদ্বেগ নিরসনের আশ্বাস দিয়ে বলেন, তিনি ভারত বিশেষত পঞ্জাবের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক চান। অমরিন্দর সন্ত্রাসবাদ, অপরাধ, মাদক সমস্যা রোধে ভারত ও কানাডার সহযোগিতার ডাক দেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্বার্থে আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক তথ্য আদানপ্রদানের কথাও বলেন।