কিন্তু হক সেন্টার ফর চাইল্ড রাইটস-এর তরফে ভারতী আলির বক্তব্য, যে দেশে দোষী সাব্যস্ত হওয়ারই নিশ্চয়তা নেই, সেখানে আরও কঠোর আইন আনতে চায় সরকার। যে দেশে বেশিরভাগ ধর্ষণই করে পরিবারের লোকজনই, সেখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধি থাকলে অভিযুক্তের রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনাই শুধু বাড়বে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগই দায়ের হয় না। কেন সারা দুনিয়ায় মাত্র প্রায় ১৩টি দেশে, যাদের বেশিরভাগই ইসলামিক রাষ্ট্র, শিশু ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের সাজা চালু রয়েছে, তার পিছনে একটা কারণ রয়েছে।
তিনি জানান, জাতীয় অপরাধ রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান হল, ৯৫ শতাংশ ধর্ষণই করে পরিবারের লোকজন। ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হয় প্রায় ২৪ শতাংশ। পকসো আইনে ২০ শতাংশ।
পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় কমিশনের প্রাক্তন সদস্য বিনোদ টিকু বলেন, আমার স্পষ্ট মত, ধর্ষণ রোধের একমাত্র উপায় হল, ৯০ দিনের বেশি সময় না নিয়ে দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। কঠোর সাজার চেয়ে বরং দ্রুত ন্যয়বিচার দেওয়ার মাধ্যমেই ধর্ষণ ঠেকানো যায়, দুনিয়াব্যাপী এটাই দেখা গিয়েছে। আমার ভয় হল, মৃত্যুদণ্ডের বিধি থাকলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারেরই কেউ না কেউ অভিযুক্ত হওয়ার ফলে বেশিরভাগ লোকই শিশুধর্ষণের অভিযোগই করবে না। ফলে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার আরও কমে যাবে।
কৈলাশ সত্যার্থীর সংগঠন চিল্ডরেনস ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় প্রকাশ, শিশু ধর্ষণ সংক্রান্ত বকেয়া মামলার পাহাড় সরাতেই দু দশক লেগে যাবে আদালতের।
শিশু অধিকার রক্ষা কর্মীদের অভিমত, সরকার বরং বেশি জোর দিক চলতি আইনগুলি জোরদার করায়, ধর্ষিতা ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করায়, দ্রুত বিচার ও সচেতনতার প্রসার ঘটানোয়।
আইনজীবী অনন্ত কুমার আস্থানা বলেন, নানা অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের সাজা আগে থেকেই আছে। কিন্তু এতে অপরাধ কমতে দেখিনি। বরং ধর্ষিতা যাতে অপরাধের কথা জানানোর সহায়ক, অনুকূল পরিবেশ পায়, অভিযুক্তের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে, সেদিকে গুরুত্ব দিক সরকার।
কাঠুয়ায় ৮ বছরের মেয়ের ধর্ষণ, হত্যা ও উন্নাওয়ের নাবালিকা ধর্ষণে দেশব্যাপী শোরগোলের মধ্যেই আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১২-র নীচের মেয়েকে ধর্ষণে দোষীর মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ অনুমোদন করে।
দিনকয়েক আগেই কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গাঁধী তাঁর মন্ত্রক এ ব্যাপারে পকসো আইনে সংশোধনের কাজ করছে বলে জানান।