নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবার সংসদে পেশ হওয়া তাত্ক্ষনিক তিন তালাক বিরোধী বিলে সমর্থন কংগ্রেসের। যদিও প্রধান বিরোধী দলের প্রস্তাব, এই বিলকে আইনের দিক থেকে মজবুত করা দরকার। বিলে তিন বছর কারাবাসের সংস্থানে আপত্তি করেছে তারা।
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, তিন তালাক বেআইনি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে প্রথম রাজনৈতিক দল হিসাবে স্বাগত জানিয়েছিল কংগ্রেস। বলেছিল, এটা মহিলাদের অধিকার রক্ষায় এক জোরদার পদক্ষেপ। দল তাত্ক্ষনিক তিন তালাক নিষিদ্ধ করার আইন সমর্থন করছে। তবে এই আইন শক্তিশালী করা প্রয়োজন। মহিলাদের অধিকার রক্ষায় এই আইনকে আরও পোক্ত করতে কিছু প্রস্তাব আছে আমাদের। বিলের পঞ্চম ধারায় মহিলাদের পর্যাপ্ত অনুদান দেওয়ার কথা রয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, সেই অনুদান কতটা হবে, কোন মাপকাঠিতেই বা তা ঠিক হবে। স্বামীর আয়ের কত শতাংশ দরকার হবে? এগুলি বিলে বলা নেই। আমরা সংখ্যালঘু মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হলে এসবের উল্লেখ থাকা দরকার বলে মনে করি।
তিনি এও বলেন, সংসদের মুসলিম মহিলাদের ডিভোর্স আইন, ১৯৮৬-র ৩ ও ৪ ধারায় ভরনপোষণের ব্যাপারে কিছু বলা হয়েছে, কিন্তু বর্তমান আইনে নেই। এই আইনে বলা নেই, কোনও মহিলা ভাতা-অনুদান পেলে পাশপাশি ভরণপোষণও পাবেন কিনা। নতুন আইনে এই বিষয়টি ঢোকানো উচিত বলে আমরা মনে করি যাতে সংশ্লিষ্ট মহিলাকে ভরণপোষণ থেকে স্বামী বঞ্চিত করতে না পারেন, যা ১৯৮৬-র আইনের ৩ ও ৪ ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে।
সুরজেওয়ালা আরও বলেন, বর্তমান আইনে তিন তালাক হয়েছে, এটা প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। ফলে তাঁকে বছরের পর বছর আদালতে ঘুরতে হবে। তিনি চরম সমস্যায় পড়বেন। কেন তিন তালাক প্রমাণের দায় স্ত্রীর বদলে স্বামীর ওপর বর্তাবে না? এই বিষয়গুলি সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিচার করুক যাতে এই আইন আরও যুত্সই হয়।
প্রস্তাবিত আইনে তিন তালাকে দোষী স্বামীর তিন বছরের কারাবাসের বিধিতে আপত্তি তুলে সুরজেওয়ালা বলেন, সরকার ভেবে দেখুক, ভাতা-অনুদান, ভরণপোষণের খরচ দেওয়ার দায়িত্ব যে স্বামীর, তিনি জেলে থাকলে কীভাবে স্ত্রী, সন্তানরা তা পাবে, সেক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব কে পালন করবে? বিলে এও বলা নেই, তিন তালাকে দোষী স্বামীর গ্রেফতারির পর স্ত্রী তার সম্পত্তির দখল পাবে কিনা। স্বামীর সম্পত্তি না থাকলে কিভাবে স্ত্রী ও নাবালকরা সন্তানদের চলবে? মহিলাদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করতে হলে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে সরকারকে।

যদিও শীর্ষ কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদের কথায় ধরা পড়েছে ভিন্ন সুর। তাঁর দাবি, প্রস্তাবিত আইনটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলানোর সামিল। ফৌজদারি আইনকে পরিবারের গণ্ডিতে প্রয়োগ করার সময় সাবধান থাকতে হবে। যে কোনও ধরনের ডিভোর্সকে অপরাধের ব্যাপার বলে দেখাটা বিশ্বের কোথাও মেনে নেওয়া হয় না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশিদ বলেন, বিবাহবিচ্ছেদ বা তার ফলাফল, প্রতিক্রিয়া-সবই দায়রা আইনের আওতায় পড়ে, ফৌজদারি আইনে নয়। একমাত্র হিংসার ক্ষেত্রেই ফৌজদারি আইন চলে। ফৌজদারি আইনকে যত দূর সম্ভব পরিবারের গণ্ডির বাইরে রাখা হয়ে থাকে। সর্বত্র এটাই সাধারণ নীতি। সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার বলেছে, তিন তালাক কোনও প্রতিষ্ঠান নয় বা জীবনের প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় নয়। তবে কেন এক্ষেত্রে কেন ফৌজদারি আইন টেনে আনা হচ্ছে?
কংগ্রেসের আরেক মুখপাত্র সুস্মিতা দেব অবশ্য বিলটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাত্পর্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে জানান, তাঁর দল মুসলিম মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েই চলবে। যদিও তিনিও বলেন, মহিলাদের আর্থিক সুরক্ষা ও মর্যাদার প্রশ্নে বিলটিকে নিশ্ছিদ্র হতে হবে, কোনও ফাঁকফোকর থাকা চলবে না তাতে।