নয়াদিল্লি:ভারতের কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ১২৫ । বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতিবিধিতে যে ধাপগুলি রয়েছে, সেখানে ভারত এখন দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে। এর অর্থ আক্রান্ত দেশগুলিতে যাতায়াত রয়েছে এবং তাঁদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, এই পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায়। এরপরের ধাপটিই সবচেয়ে আশঙ্কার। এক্ষেত্রে চিন ও ইতালির ঘটনার মতো বড় এলাকাজুড়ে বা গোষ্ঠীর মধ্যে ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। ভাইরাসের অগ্রগতিতে এই পর্বে রাশ টানতে পারলে ব্যাপক সংক্রমণের আশঙ্কা এড়ানো যেতে পারে। আর এরজন্য যা কিছু করার তা করতে হবে আগামী দুই বা চার সপ্তাহের মধ্যে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমন একটা সময়ে এই চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে, যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত বলে সন্দেহভাজনদের স্ক্রিনিং এড়িয়ে যাওয়া এবং কোয়ারিন্টাইন থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানা গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সংক্রান্ত চলতি ব্যবস্থা বজায় থাকে তাহলে ব্যাপকহারে এই ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
মঙ্গলবার ভারতের আক্রান্তের সংখ্যা ১২৫। এরমধ্যে দিল্লি, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রে একজন করে করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে তৃতীয় ধাপে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যেতে পারে। তাঁরা বলেছেন, কোনও গোষ্ঠী বা কোনও বড় এলাকায় সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভারতের হাতে ৩০ দিন সময় রয়েছে। সম্প্রদায় গত সংক্রমণ হয় তখন, যখন লোকজন আক্রান্তদের সংস্পর্শে না এসে এবং আক্রান্ত দেশগুলিতে না গিয়েও সংক্রমণের শিকার হয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই সময়টাই প্রস্তুত থাকতে হবে এবং ক্ষিপ্র হতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একযোগে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ও জনগনের মধ্যে সচেতনতা ভিত্তির স্বাস্থ্য বিধির মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভাইরাস চারটি ধাপে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম পর্যায়ে, আক্রান্ত দেশগুলি থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমন। দ্বিতীয় পর্যায়ে, স্থানীয় সংক্রমণ। তৃতীয় পর্যায়, কোনও সম্প্রদায় বা বড় এলাকাজুড়ে সংক্রমণ। চতুর্থ পর্যায়, এই রোগ যখন মহামারির চেহারা নেয়।
রোগ ছড়িয়ে পড়ার এই তৃতীয় পর্যায়ের সাক্ষী হয়েছে ইতালি, চিন ও আমেরিকার মতো দেশ।
এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এখনও এদেশে সম্প্রদায় বা বড় এলাকাজুড়ে রোগ ছড়িয়ে পড়েনি। কিন্তু রোগ কখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠতে পারে, তাও জানা নেই। আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিস্থিতিও অনুকূল নয়। তাই আগামী দুই সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নজরদারি, আক্রান্তের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা, সেল্ফ-কোয়ারিন্টাইন, বারবার হাত ধোয়া, জন সমাগম এড়ানো, দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি বা কাশি হলে নিয়মবিধি মেনে চলার মতো বিষয়গুলি পালন করতে হবে।


তৃতীয় পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ ও সমাগমের মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় এবং আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুরভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ইতালিতে দেখা গিয়েছে যে, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের ৩০০ থেকে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ১০ হাজার।
সংক্রমণ প্রতিরোধে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি, বেশি সংখ্যায় জমায়েত নিষিদ্ধ হয়েছে। বাতিল হয়েছে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি জারি করে করোনাভাইরাসকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করেছে। পশ্চিমবঙ্গে মহামারি রোগ আইন প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর পাশাপাশি, রোগ এড়াতে সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে। মেনে চলতে হবে নির্দেশিকা। এভাবেই করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখে দেওয়া যেতে পারে।