নয়াদিল্লি: গত চার বছরে রাজনৈতিক দলগুলি যে চাঁদা পেয়েছে তার বেশিরভাগই এসেছে আজানা উত্স থেকে। অথচ এ ধরনের চাঁদা বন্ধ করার কথা বলছে নির্বাচন কমিশন। গত চার বছরে ৩ হাজারের বেশি দানের ক্ষেত্রে দাতাদের প্যান বা ঠিকানা নেই। নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলির পেশ করা আয়ের খতিয়ান বিশ্লেষণ করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ২০ হাজার টাকার বেশি দান পেলে রাজনৈতিকদলগুলিকে দাতাদের সম্পর্কে কমিশনকে তথ্য জানাতে হয়।
রিপোর্টে জানা গেছে, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৫-১৬ তে কর্পোরেট জগতের চাঁদার অধিকাংশই ঢুকেছে বিজেপি ঘরে। ওই চার বছরে কর্পোরেট জগত থেকে পাঁচটি জাতীয়  দল ৯৫৬.৭৭ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে। এরমধ্যে বিজেপিই পেয়েছে ৭০৫.৮১ কোটি টাকা।
এই সময়পর্বের মধ্যেই ২০১৪-র সাধারণ নির্বাচনে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। ২,৯৮৭ টি কর্পোরেট হাউস থেকে দল চাঁদা পেয়েছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস ১৬৭ টি প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছে  ১৯৮.১৬ কোটি টাকা।
এনসিপি পেয়েছে ৫০.৭৩ কোটি টাকা। সিপিএম ১.৮৯ কোটি টাকা এবং সিপিআই ০.৭১ কোটি টাকা পেয়েছে।
এডিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিজেপির ভাঁড়ারে যে টাকা এসেছে তার মধ্যে বড় অংশ এসেছে ট্রাস্ট, রিয়েল এস্টেট বা আবাসন ক্ষেত্র, খনি, উত্পাদন, তেল ও শক্তি, নির্মাণ এবং রফতানি-আমদানি সংস্থাগুলির কাছ থেকে। কর্পোরেট সেক্টরকে এই ১৪ টি ভাগে ভাগ করে দেখিয়েছে এডিআর।
রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে স্বচ্ছ্বতা আনার দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে অর্থশক্তির দাপট কমানোর লক্ষ্যেই এই দাবি।
তথ্যের অধিকার আইন রাজনৈতিক দলগুলির ওপর প্রযোজ্য নয়। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রদত্ত তথ্য ও আয়কর রিটার্ন থেকে দলগুলির আর্থিক বিষয় কিছুটা জানা যায়। এখন একটা বড় অঙ্কের অর্থ আসে অজানা উত্স থেকে। দাতাদের নামপ্রকাশ করা হয় না।
এডিআরের রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-র নির্বাচনের আগে বিজেপি যখন ক্ষমতায় ছিল না তখনও বেশিরভাগ দাতাই কংগ্রেসের তুলনায় বিজেপির প্রতিই বেশি অনুগ্রহ দেখিয়েছে। এর থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, তারা আশা করছিল যে, লোকসভা ভোটে জিততে চলেছে বিজেপিই।
২০১২-১৩-তে যখন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার দু্র্নীতির নানবিধ অভিযোগে জেরবার ছিল, তখনও ওই একই ঘটনা ঘটেছিল।
চাঁদের পরিমাণ ২০১৪-১৫ তে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছয়। গত চার বছরের ধরে প্রাপ্ত চাঁদার তুলনায় ওই সময় ওই হার ৬০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।
২০১২-১৩ তে মোট চাঁদার ৮৯ শতাংশ গিয়েছিল বিজেপির ঘরে। ভোটের পর ২০১৫-১৬ –তে এর পরিমাণ কম হয়। যদিও এক্ষেত্রেও দাতাদের পছন্দের দল ছিল বিজেপি। এই সময়ে তারা মোট চাঁদার ৮৭ শতাংশ পেয়েছে।