নয়াদিল্লি: করোনা ভাইরাসে কোন কোন দেশ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত, কত মানুষ কোন দেশে মারা গিয়েছেন, কত জন সুস্থ হয়েছেন, সে সব নিয়ে গত কয়েক মাসে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ঠিক এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত যে বিষয় তা হল, কোন দেশে তৈরি কোন টিকার গবেষণা কেমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে প্রয়োগে ৭০ শতাংশ সাফল্য মিলেছে। চেষ্টা চলছে এই সাফল্যকে ৯০ শতাংশে উত্তীর্ণ করার। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া তৈরি করেছ অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা প্রথমে ভারতে এই টিকা বন্টনের উপর জোর দিচ্ছেন।রাশিয়ার স্পুটনিক ফাইভ ভ্যাকসিন প্রস্তুতির কাজও সিংহভাগ হয়ে গিয়েছে। রাশিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, তাদের তৈরি এই টিকা আমেরিকান কোম্পানিগুলির টিকা চেয়ে দামে অনেক কম হবে। এই কথা তাঁরা ফাইজার এবং মডার্না ভ্যাকসিনের কথা মাথায় রেখেই বলতে চেয়েছে।


পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ৭০ শতাংশ সাফল্যের মুখ দেখা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন এবার শতকরা ৯০ ভাগ সফল হওয়ার চেষ্টায় লেগে রয়েছে। সংস্থার দাবি এর দাম যেমন কম হবে, তেমনই বাজারেও খুব সহজলভ্য হবে। এছাড়া পরিমাণগতভাবে ফাইজার থেকে এই ভ্যাকসিন এগিয়ে থাকবে বলে আশা করছে সংস্থা। কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে এটি বিশ্বে ২০০ মিলিয়ন টিকা সরবরাহ করে ফেলবে এক লপ্তে, যা কীনা ফাইজারের চেয়ে চার গুণ বেশি।

প্রাথমিকভাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ সাফল্য পাওয়ায় একটু যেন পিছনের সারিতে চলে আসছিল, কারণ একই সময়ে ফাইজার, মডার্না কিংবা রাশিয়ায় স্পুটনিক ফাইভের সাফল্যের মাত্রা ৯০ শতাংশ।কিন্তু অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের বেশ কিছু অ্যাডভান্টেজও রয়েছে। অন্য টিকাগুলির তুলনায় এর দাম বেশ কম।আবার, একে সাধারণ ফ্রিজে রেখে দিলেও কোনও ক্ষতি হয় না। রক্ষণাবেক্ষণের দিক দিয়ে সুবিধাজনক। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার, মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার বিশেষ ফ্রিজার ছাড়া ফাইজার সংরক্ষণ করাই সম্ভব নয়।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন হাতে আসার বিষয়টি ভারতের পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক হতে চলেছে। কারণ এর পার্টনার ভারতীয় সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট। এর কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা জানিয়েই রেখেছেন যে তাঁর কোম্পানি ভারতে ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারেই সবার আগে মন দেবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের  হাতে ভ্যাকসিন তুলে দেওয়াটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্রমে কো-ভ্যাক্স, তারপর ভাবা হবে আমাদের দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যুক্ত দেশগুলির কথা। আমি এ ভাবেই অগ্রাধিকার সাজিয়েছি।

পুনাওয়ালা জানিয়েছেন ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যেই ভারতের বাজারে ভ্যাকসিন এসে পড়বে বলে তিনি আশাবাদী।পারচেজ এগ্রিমেন্টের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই দেশের সরকারের সঙ্গে তাঁর একপ্রস্থ কথা হয়ে গিয়েছে।

অন্যদিকে, রাশিয়া জানিয়েছেন পাশ্চাত্য দেশগুলির তুলনায় তারা করোনাভাইরাস টিকা অনেক কম দামেই মানুষের হাতে তুলে দিতে পারবে। তাদের বক্তব্য, স্পুটনিক ফাইভ ভ্যাকসিনের দাম যেমন কম হবে, তেমনই তা সংরক্ষণ করতেও বিশেষ বেগ পেতে হবে না। আর দামের দিক দিয়ে তা আমেরিকার থেকেও অনেক কম হবে। আগেই ইঙ্গিত মিলেছিল যে পিফিজার ভ্যাকসিনের দাম হবে ১৯.৫০ মার্কিন ডলার। আবার মডারেনা ভ্যাকসিনের দাম হবে ২৫.৩৭ ডলার।অর্থাৎ কারও যদি দুটো ডোজ নিতে হয়, তাহলে পিফিজার এবং মডারেনা ভ্যাকসিনে মূল্য দাঁড়াবে যথাক্রমে ৩৯ ডলার ও ৫০ ডলার।

এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়ে বিশেষ আশা ব্যক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। হু-র চিফ সায়েন্টিস্টি সৌম্য স্বামীনাথন জানাচ্ছেন এই ভ্যাকসিনের ক্ষমতা কতটা এবং কতটা নিরাপদ তা জানতে তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।