কালাহান্ডি (ওড়িশা): ‘অভাগীর স্বর্গ’-র কথা মনে আছে? মাকে পোড়ানোর কাঠ জোগাড়ের জন্য দোরে দোরে ভিক্ষে করেও ব্যর্থ হয়েছিল কিশোর কাঙালিচরণ। এও এক অভাগীর গল্প। কিন্তু শেষটা একটু আলাদা। ওড়িশার কালাহান্ডির এই ‘অভাগী’, কনক শতপথীর হতদরিদ্র কন্যারা দেখিয়ে দিলেন, সমাজের সাহায্যের থোড়াই কেয়ার করেন তাঁরা। মৃত মাকে দাহ করার কাঠ না থাকায় বাড়ির চাল ভেঙে তাঁরা সম্পন্ন করলেন মায়ের শেষকৃত্য।

লোকাচার বলে, পুত্রসন্তান মুখাগ্নি না করলে পিতা মাতার মুক্তি হয় না। কালাহান্ডির ৭৫ বছরের কনক শতপথীর কোনও পুত্র ছিল না। কিন্তু তাঁর মেয়েরা যেভাবে নিজেদের মাথার চালটুকু বাঁচানোর তোয়াক্কা না করে মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করলেন, তা কি তাঁর ছেলে থাকলে পারতেন?

দীর্ঘ রোগভোগের পর শুক্রবার রাতে মারা যান কনক শতপথী। তাঁর মেয়েরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি একটু সাহায্য চেয়ে ভিক্ষে করেন, যাতে মাকে দাহ করা যায়। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও কোথাও কোনও সাহায্য না মেলায় খাটিয়ায় শুইয়ে মায়ের দেহ শ্মশানে নিয়ে যান তাঁরা। দাহ করার কাঠ কেনার সামর্থ্য না থাকায় বাড়ির চাল ভেঙে সেই কাঠকুটোয় সম্পন্ন করেন মৃত মায়ের শেষকৃত্য।

শরৎচন্দ্রের কাঙালি জানত না, তার মা স্বর্গলাভ করল কিনা। কিন্তু কালাহান্ডির এই দরিদ্র মেয়েরা যে বিরল সাহস ও আত্মমর্যাদার পরিচয় দিয়ে নির্মম সমাজের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন, তাতে নিঃসংশয়ে বলা যায়, তাঁদের মায়ের আত্মা তৃপ্তি পেয়েছেন।