নয়াদিল্লি: পেটের দায়ে ডাক্তারের বাড়ি কাজ করতে এসেছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। বদলে পেয়েছে গরম লোহার রডের ছ্যাঁকা, মুখে থুতু, কামড়, এমনকী কাঁচি দিয়েও তার চোখ খুঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে। না খাইয়ে রাখা হয়েছে দিনের পর দিন।


উত্তর দিল্লির অভিজাত ওই এলাকা থেকে মহিলা দাঁতের ডাক্তারটিকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী জয়হিন্দ জানিয়েছেন, মেয়েটির অবস্থা ভয়াবহ। তাঁদের হেল্পলাইনে ফোন করে একজন জানান, স্থানীয় মডেল টাউনের একটি বাড়িতে একটি মেয়েকে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়েছে। পুলিশ নিয়ে তখনই ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা মেয়েটিকে উদ্ধার করেন।

১৪ বছরের ওই কিশোরী ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়ে। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা চলছে তার। সে প্রচণ্ড আতঙ্কিত, শারীরিক আঘাতও রয়েছে।

অভিযুক্তর নাম হল নিধি চৌধুরী, তিনি পেডিয়াট্রিসিয়ান ও দাঁতের ডাক্তার। শোনা যাচ্ছে, চাকরি করেন দিল্লির এক সরকারি হাসপাতালে। যদিও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে মুখ খুলতে রাজি নয় পুলিশ। তাঁকে তিহার জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মহিলা থাকতেন স্বামী ও ৭ বছরের মেয়ের সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে। কাজের মেয়েটির ওপর প্রচণ্ড অত্যাচার করতেন তিনি, মাইনে তো দিতেনই না, কনকনে শীতের রাত্তিরেও তাকে সোয়েটার পরতে দিতেন না, কম্বল মুড়ি দেওয়ার অনুমতিও ছিল না। দিনের পর দিন তাকে না খাইয়ে রাখতেন। কিছুদিন আগে মেয়েটির ওপর চেপে বসে তার মাথার ওপর নাকি ওজনের মেশিন চাপিয়ে দেন তিনি।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, নিধির ব্যবহারের জন্য কোনও কাজের লোকই তাঁর বাড়িতে সপ্তাহখানেকের বেশি টেকেন না, একইভাবে তিনি মারধর করেন এক বহুজাতিক সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান তাঁর স্বামীকেও।

আহত কাজের মেয়েটির বাবা ঝাড়খণ্ডে চাষবাস করেন। এক প্লেসমেন্ট এজেন্সি গত বছর তাকে দিল্লি নিয়ে আসে, তারাই মাসচারেক আগে তার কাজ জুটিয়ে দেয় নিধির বাড়িতে। এই কমাসেই তার ওপর ভয়াবহ অত্যাচার হয়েছে, গোটা মুখে কামড়ের দাগ, শোনা যাচ্ছে, তা নিধিই করেছেন। কাঁচি দিয়ে চোখের পাশ খুঁচিয়ে ফুলিয়ে দিয়েছেন, গলা টিপে ধরেছেন বারবার। নিজের মেয়েকেও উসকানি দিয়েছেন, তার সঙ্গে এমন করতে।

দিল্লি মহিলা কমিশন অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে। ঠিকমত চিকিৎসার পর মেয়েটির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে তারা।