সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিনবাগ আন্দোলন নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, দিল্লির শাসকদল আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেস এই আন্দোলনগুলির নেপথ্যে রয়েছে। তিনি বলেছেন, এই দুটি দল তোষণের রাজনীতি করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধান ও জাতীয় পতাকা সামনে রেখে তারা জ্ঞান দিচ্ছে। প্রকৃত চক্রান্ত থেকে নজর সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই গেম প্ল্যান যদি না থামে, তাহলে তারা আগামীদিনে তারা অন্য কোনও রাস্তা বা গলি জ্যাম করতে পারে। এই নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া যায় না।
এই নৈরাজ্য ঠেকাতে তিনি ভোটে দিল্লিবাসীর জনাদেশের আর্জি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সিএএ-র বিরুদ্ধে দিল্লিতে আন্দোলন চলছে। শাহিনবাগের আন্দোলনের ধাঁচে দেশের বিভিন্ন স্থানে মহিলারা আইনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, এই প্রতিবাদগুলি সমাপতন কিনা। তিনি বলেছেন, সীলামপুর হোক, বা জামিয়া বা শাহিনবাগ, সিএএ-র বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবাদ চলছে। এই প্রতিবাদগুলি কি সমাপতন? না, তা নয়। এটা রাজনৈতিক পরীক্ষানিরীক্ষা। এর পিছনে রাজনীতির এমন একটা রাজনৈতিক নকশা রয়েছে, যা দেশের সম্প্রতির পরিপন্থী। এই প্রতিবাদ যদি একটি আইনের বিরুদ্ধে হত, তাহলে সরকারের বারংবার আশ্বাসের পর তা শেষ হয়ে যেত।
তিনি বলেন, ‘দেশভাগের পর অনেক মানুষ দিল্লিতে এসেছিলেন।দেশভাগের পর সবাইকেই জায়গা দিয়েছে দিল্লি।দিল্লিবাসীর ভোট এবার বদলে দেবে দিল্লিকে’।
মোদি বলেন, ‘নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাসী বিজেপি।বিজেপির কাছে দেশ সবচেয়ে বড়।প্রতিশ্রুতি পূরণে দিনরাত কাজ করছে সরকার। দিল্লিবাসী কী চায়, ইঙ্গিত মিলেছে লোকসভা ভোটেই’।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে বিজেপি দিল্লিতে ক্ষমতায় এলে অবৈধ কলোনির উন্নয়ণ নিয়ে কাজ করা হবে এবং ২০২২-র মধ্যে সকলকে আবাসন দেওয়া হবে। দিল্লির ৪০ লক্ষ অবৈধ কলোনির বাসিন্দাদের মালিকানা প্রদানের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যাঁরা কখনও ভাবেননি, তাদের ঘরের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।এখন সরকারি বুলডোজারের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি মিলেছে।দিল্লিতে কলোনি উন্নয়ন পরিষদ তৈরি হবে।বস্তিবাসীদের জন্য পাকা ঘর তৈরি করে দেবে বিজেপি। গোটা দেশে আবাস যোজনায় ২ কোটি ঘর তৈরি হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় একটাও ঘর হয়নি দিল্লিতে। যতক্ষণ কেজরিওয়ালরা থাকবেন, দিল্লির ভাল হবে না’।
মোদি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নিশানা করে বলেন, দিল্লির বর্তমান সরকার সব ধরনের কল্যাণমূলক কাজে বাধা তৈরি করেছে। তাদের রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছু করার নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘৃণার রাজনীতি নয়, উন্নয়নের নীতিতে চলবে দিল্লি, উন্নয়নের জাতীয় নীতিতেও এগিয়ে যাবে গোটা দেশ।এত দ্রুত কাজ হছে, যে বিরোধীরা বলছে ধীরে করুন।এই প্রথম সরকারের বিরুদ্ধে কোনও ইস্যু নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার একের পর এক বড় সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।৭০ বছর পরে ৩৭০ ধারা থেকে মুক্তি মিলেছে।৭০ বছর পরে রামমন্দির নিয়ে ফয়সালা হয়েছে।৭০ বছর পরে সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত।শত্রু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আইনও কার্যকর হয়েছে।৪০ বছর পরে এক পদ, এক পেনশনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে’।
তিনি বলেন, আগের সরকারগুলি সমস্যা জিইয়ে বিভ্রান্তি বাড়াত। এই সব সমস্যার আগেও সমাধান করা যেতে পারত’।
মোদি বলেন, প্রথমবার চাষীর অ্যাকাউন্টে সরাসরি সরকার সাহায্য যাচ্ছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেন, ‘এত আন্দোলন, তাহলে দিল্লিতে কেন লোকপাল কার্যকর নয়?’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সাধারণ বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাজেট শুধু এই বছর নয়, দশককে দিশা দেখাবে। বাজেটে সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হবেন।যুবকদের চাকরির জন্য ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি। আয়করে এমন প্রযুক্তি আসছে, সব কিছু স্বচ্ছ হবে।মধ্যবিত্তের হতে যাতে বেশি টাকা থাকে, তার ব্যবস্থা হয়েছে।আয়করে নতুন ব্যবস্থায় মধ্যবিত্ত আরও সুবিধে পাবে।
তিনি বলেন, এই প্রথম আয়কর প্রশাসনের জন্য নতুন আইন আনা হয়েছে। সত্ আয়করদাতাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখবে সরকার।নতুন আয়কর কাঠামোয় সবার লাভ হবে।
দিল্লির আপ সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে আয়ুষ্মান প্রকল্প কার্যকর করতে দেওয়া হয়নি।’
মোদি প্রশ্ন তোলেন, ‘মানবিকতারও কি ঊর্ধ্বে রাজনীতি? সবকিছুতেই রাজনীতি, এমন দিল্লি চেয়েছিলেন?’
বিরোধীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কিছু মানুষ রাজনীতির দুনিয়া বদলাতে এসছিলেন।সেই মানুষদের মুখোশ এখন খুলে গেছে। এঁরাই দেশের সেনাকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন।সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর এরাই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে আগে হামলা হত, এখন তা বন্ধ হয়েছে।এরাই বাটলা হাউস নিয়ে পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলেছিল’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।এটা শুধু একটা আইনের বিরুদ্ধে নয়। আপ, কংগ্রেস রাজনীতির খেলা খেলছে।আপ-কংগ্রেসের রাজনীতি এখন স্পষ্ট হয়েছে গেছে।আন্দোলনের নামে হিংসায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।এরা আদালতকেও পরোয়া করে না।
শাহিনবাগের আন্দোলনকে কটাক্ষ করেন মোদি। তিনি বলেন, ‘দিল্লি থেকে নয়ডা আসা-যাওয়ায় কত সমস্যা হচ্ছে।সব দেখেও এরা চুপ করে বসে আছে।এটা রোখার কাজ শুধু দিল্লিবাসী করতে পারে।তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে বিরোধীরা।’