নয়াদিল্লি: শালিমার বাগের ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করল দিল্লি সরকার। কয়েকদিন আগে ওই হাসপাতালের ডাক্তাররা দুটি সদ্যোজাত শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু শেষকৃত্যের সময় দেখা যায়, একটি জীবিত। এ নিয়ে বিস্তর হইচই হয়। এ ঘটনা ছাড়াও হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিত্সায় অবহেলা, গাফিলতির আরও অভিযোগ ছিল। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দেয়, তারপরই লাইসেন্স বাতিলের পথে হাঁটল অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার। বাচ্চাদুটিকে ঠিকঠাক না দেখেই মৃত ঘোষণা করা মেনে নেওয়া যায় না বলে জানান জৈন। এরপরই পরবর্তী নির্দেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে বলে জানায় দিল্লি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নতুন কোনও ইনডোর রোগী ভর্তি না করার, যাবতীয় আউটডোর চিকিত্সা পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে তারা।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ট্যুইট করেছেন, বেসরকারি হাসপাতালের দৈনন্দিন কার্যকলাপে মাথা গলাতে চাই না আমরা। তবে হাসপাতাল খোলাখুলি রোগীর পরিবারকে লুঠ করবে বা চিকিত্সায় গাফিলতির মতো অন্যায় করবে, এটা মেনে নেওয়া হবে না। এমন ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করা হবে না।
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রীও সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, অন্যায় করাটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে ম্যাক্স হাসপাতালের। আগেও ওদের তিনটি নোটিস পাঠানো হয়েছিল। সেগুলিতেও ওরা দোষী প্রমাণিত হয়েছে।
দুটি সদ্যোজাত শিশুকে মৃত ঘোষণা করা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দিল্লি মেডিকেল কাউন্সিল, মেডিকেল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়াই ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকারী।
জৈন জানিয়েছিলেন, গত ২২ নভেম্বর ম্যাক্স হাসপাতালকে নোটিস পাঠানো হয় অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল রোগীদের চিকিত্সা ও ডেঙ্গুর রোগীদের শয্যা সংক্রান্ত নিয়মবিধি ভাঙার অভিযোগে।
এদিকে ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, লাইসেন্স বাতিল অত্যন্ত কঠোর, অন্যায় সিদ্ধান্ত। আমাদের বক্তব্য জানানোর যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়নি। ব্যক্তির নিজের ভুল হয়ে থাকলেও সেজন্য হাসপাতালকে দোষী সাব্যস্ত করা অন্যায়। এতে বহু মানুষ চিকিত্সা পরিষেবা পাবে না। রাজধানীতে হাসপাতাল পরিষেবার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা রোগী সুরক্ষায় দায়বদ্ধতা, আমাদের ক্ষমতার মধ্যে যথাসাধ্য পরিষেবা বহাল রাখতে বদ্ধপরিকর। আমরা সবরকম রাস্তা খতিয়ে দেখছি।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও লাইসেন্স বাতিলকে 'একটু বেশিই কঠোর পদক্ষেপ' বলে উল্লেখ করেছে। সংগঠনের প্রধান কে কে আগরওয়াল, যিনি নিজেও কার্ডিওলজিস্ট, বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে এটা ভুল বলে মনে করি। সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নিল। একজন ডাক্তারের স্তরে যে ভুল হয়েছে, সেজন্য একটা হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা যায় না। সরকারের সিদ্ধান্ত সমাজের স্বার্থের পক্ষে নয়। তদন্তের পর যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ভুলকে সমর্থন করছি না। তবে লাইসেন্স বাতিল করাটা একটু বেশিই কঠোর পদক্ষেপ। এইমস, সফদরজং হাসপাতালের মতো প্রথম সারির সরকারি প্রতিষ্ঠানেও তো ভুল হয়। সরকার এভাবে লাইসেন্স বাতিল শুরু করলে চিকিত্সা পরিষেবাই তো বন্ধ হয়ে যাবে।
ডাক্তারদের মৃত ঘোষণা করা সদ্যোজাত জীবিত! বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করল দিল্লি সরকার
Web Desk, ABP Ananda
Updated at:
08 Dec 2017 08:38 PM (IST)
দেশ (nation) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -