নয়াদিল্লি: ভেতরে ভেতরে কানাঘুষো চলছে। কিন্তু বাইরে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। চার রাজ্যে ভরাডুবির পর কেউ কেউ টুইটারে বেমক্কা ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলেছেন। তারপরেই সাবধান হয়ে শুধরে নিয়ে বলেছেন, সবটাই ব্যক্তিগত মত, দলের সঙ্গে যোগ নেই। সাপের ছুঁচো গেলা কাকে বলে তা হাড়ে হাড়ে বুঝছে কংগ্রেস দল। দেশের মানচিত্রে রাজনৈতিক অস্তিত্বের দিক দিয়ে দেখতে গেলে শতাব্দী প্রাচীন দলটি এখন কার্যত সাইনবোর্ড। কর্নাটক, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল, বিহারে জোটের ছোট শরিক আর উত্তরপূর্বের তিন রাজ্য- ব্যস, কংগ্রেসের গতিবিধি শেষ। প্রথম তিন রাজ্যে ভোটে যে কংগ্রেস ফিরবে তার নিশ্চয়তা অতি বড় সমর্থকও দিচ্ছেন না। অথচ আইসিইউতে চলে যাওয়া দলকে উদ্ধার করতে যে নয়া নেতৃত্বের প্রয়োজন তা ভালই বুঝছে কংগ্রেস। কিন্তু ১০, জনপথে কথাটা তুলে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? কে গিয়ে সনিয়া গাঁধীর সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, কংগ্রেসের মত বৃহৎ, বিচিত্র দল চালানোর যোগ্যতা আপনার ছেলের নেই, দয়া করে তাঁকে নিষ্কৃতি দিন? নাঃ, সাহস করতে পারছেন না কেউ। যেমন ধরুন সলমন সোজ। ট্যুইটারে দুচার কথা বলে ফেলেছিলেন। তারপরেই থুড়ি বলে পরিস্থিতি সামলেছেন।





ভোটে হারের পর রাহুল গাঁধী তাঁর গতে বাঁধা বুলি আউড়ে গেছেন। আবার চেষ্টা চলবে। অন্তহীন এই চেষ্টা কোনওদিন সফল হবে, এমন আশা কংগ্রেস নেতাকর্মীদের নেই। মুশকিল হল, ভোটে জয় হলে রাহুলকে কৃতিত্ব দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কংগ্রেস নেতানেত্রীরা ভিড় জমালেও হারার দায় তাঁকে যে মোটেই দেওয়া যাবে না সেটা জানেন সকলেই। তাই জিতলে তার কৃতিত্ব পায় রাহুলের ‘সুযোগ্য নেতৃত্ব’, হারলে দায় বর্তায় রাজ্য নেতৃত্বের ঘাড়ে।
রাজ্য থেকে শক্তিশালী মুখ তুলেও আনা হচ্ছে না, পাছে তিনি রাহুলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ান। ফলে রাহুলের থেকে ধারে ভারে যোগ্যতা অনেক বেশি হলেও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ারা পিছনের বেঞ্চেই বসে রয়েছেন বছরের পর বছর। ওয়াই এস আর পুত্র জগন্মোহন রেড্ডিকে তো দলই ছাড়তে হল।

আরও পড়ুন ৪ রাজ্যে হার, মুখ চুন করে রাহুল বলছেন, আরও পরিশ্রম করব

এই পরিস্থিতিতে মুখ খুলেছেন সাংসদ শশী থারুর। অতি সাবধানে করা তাঁর মন্তব্য বলছে, দলে এখনই চোখে পড়ার মত কিছু পরিবর্তন দরকার। ২০১৪-র ভোট বিপর্যয়ের পর থেকে দলে আলোচনা, আত্মসমীক্ষা চলছে। কিন্তু নেতৃত্বের এবার সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। শুধু থারুর নন, রাহুল ঘনিষ্ঠ বৃত্তের অন্যতম দিগ্বিজয় সিংহও বলছেন, আত্মসমীক্ষা যথেষ্ট হয়েছে, এবার বড়সড় সার্জারির সময়। লোকসভা ভোটের পর দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে সব বরিষ্ঠ নেতার কাছ থেকে রিপোর্ট চান রাহুল গাঁধী। সই রিপোর্ট যথাসময়েই দেওয়া হলেও তার ভিত্তিতে কাজ কিন্তু এক ফোঁটাও হয়নি। এখন প্রশ্ন হল, দলের এই আত্মসমীক্ষা আর কতদিন চলবে?
তবে এত কিছুর পরেও পরিষ্কার, কংগ্রেস রয়েছে কংগ্রেসেই। ঠারে ঠোরে এত কিছু বলার পরও থারুর, দিগ্বিজয়রা সেই রাহুলকেই দ্রুত কংগ্রেস সভাপতি করার জন্য সওয়াল করেছেন। কর্মীদের তাঁরা বোঝাতে চান, রাহুল সহ সভাপতি থাকায় যা কিছু সমস্যা, তিনি সভাপতি হলেই ভাগ্য ফিরবে। কিন্তু কথা হল, সেই ভাগ্য ফেরা প্রত্যক্ষ করতে কংগ্রেস দলটা ততদিন রইবে কিনা।