শ্রীনগর: দিনের শেষে নিজের আবাসিক কোয়ার্টারে ফিরে এসেছিলেন ক্লান্ত, অবসন্ন ডাঃ আবদুল গনি খান। কাশ্মীরের এই ডাক্তারের গোটা দিনটা কেটেছে পুলওয়ামা জেলায় এনকাউন্টারের মধ্যেই স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষে জখম লোকজনকে চিকিত্সায়। হঠাত জরুরি তলব। এখনই হাসপাতালে চলে আসুন। তখনও তিনি জানতেন না, কী মর্মান্তিক ঘটনার মুখোমুখি হতে চলেছেন? হাসপাতালে পা দিয়ে শুনলেন, সেদিনের নিরাপত্তাবাহিনী, জনতা সংঘর্ষে নিহত হয়েছে তাঁরই ১৬ বছরের ছেলে ফইজান আহমেদ খান। হাসপাতালে আনা হয়েছে তার নিথর দেহ।


গত শুক্রবার থামুনা গ্রামে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে এনকাউন্টার চলাকালে পাথরবাজদের সঙ্গেও লড়তে হচ্ছিল নিরাপত্তাবাহিনীকে। সেই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আরও অনেকের সঙ্গে জখম হয় ফইজানও। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজপোরায় এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানকার ডাক্তাররা শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যাবে কিনা, এই সংশয়ের মধ্যে জেলা হাসপাতালে রেফার করেন, যেখানে তার বাবা কাজ করেন।

জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সুপার ডাঃ রশিদ পারা বলেন, রাজপোরা হাসপাতালের ডাক্তাররা ফইজানকে চিনতে পেরে আমাদের খবর দেন। জেলা হাসপাতালে নিতে নিতে ওর যে কিছু হয়ে যেতে পারে, তাও বলেন। আমাদের এখানে ওকে নিয়ে আসা হলে বাঁচিয়ে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, ওর মধ্যে প্রাণের কোনও স্পন্দন ছিল না।

পারা বলেন, ফইজানের জন্ম এই হাসপাতালেই হয়েছিল। ছোটবেলা এই ক্যাম্পাসেই কেটেছিল ওর। যে হাসপাতালে ওর জন্ম, সেখানেই মৃত ঘোষণার জন্য আনা হল ওকে। ভাগ্যের কী পরিহাস! আমরা ডাঃ খানকে ছেলের মৃত্যুর কথা না জানিয়েই ডেকে আনি। ওনাকে অন্য একটা ঘরে বসিয়ে ফইজানের দেহ চাদরে মুড়ে ফেলি।

সহকর্মীরা সবাই মিলে গিয়ে ডাঃ খানকে ছেলের মৃত্যুসংবাদ দেন, সমবেদননা জানান। উনি ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে গিয়ে ছেলেকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সবার চোখে তখন জল।