বেঙ্গালুরু: করোনা যুদ্ধে তিনি ছিলেন একেবারে সামনের সারির যোদ্ধা। বেঙ্গালুরু থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে প্রাইমারি হেলথ সেন্টারে দিবারাত্র সেবা করেছেন করোনা রোগীদের। সেই ডাক্তারকেই কি না কার্যত বিনা চিকিৎসায় মরতে হল। ঘটনা কর্নাটকের।
কোভিড ১৯ অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজের জীবনের কথা না ভেবে জনসেবায় নিজেকে সঁপেছিলেন বছর পঞ্চাশের চিকিৎসক মঞ্জুনাথ। রামনগর জেলার প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা করছিলেন ডঃ মঞ্জুনাথ। জুনের শেষের দিকে উপসর্গ দেখা দেওয়ায় নিজে থেকেই করোনা টেস্ট করান তিনি।
রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগেই চিকিৎসকের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ২৫ জুন থেকে ধুম জ্বর আর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় মঞ্জুনাথের। কোনওরকম দেরি না করেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করে তাঁর পরিবার। এমনই দুর্ভাগ্য, হাতে করোনা রিপোর্ট না থাকায় হাসপাতাল ভর্তি নিতে অস্বীকার করে। একটা, দুটো নয় পরপর তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ‘বেড নেই’, ‘ভেন্টিলেটর নেই’ বলে মৃত্যু পথযাত্রী ডাক্তারকে ফিরিয়ে দেয়। এরপর একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হয়। পরিবার ঠিক করে সেখান থেকে তাঁকে বিএমসিআরআই-তে ভর্তি করা হবে। চিকিৎসকের ফুসফুস সংকুচিত হতে থাকার কারণে সমস্যা আরও বাড়ে। ভেন্টিলেটরে রেখে শুরু হয় চিকিৎসা। মঞ্জুনাথকে বাঁচাতে তড়িঘড়ি সাইকোথেরাপিস্টের জোগাড় করতে বলা হয়। করোনার ভয়ে একের পর সাইকোথেরাপিস্টরা কোভিড ওয়ার্ডে ঢুকতে অস্বীকার করেন। এরপর একজন বেসরকারি সাইকোথেরাপিস্ট পিপিই পরে করোনা ওয়ার্ডে ঢুকতে সম্মত হন। তবে বিএমসিআরআই-তে থেরাপি শুরুর আগেই মৃত্যু হয় ওই করোনা যোদ্ধা চিকিৎসকের।
একরাশ দুঃখ নিয়ে মঞ্জুনাথের শ্যালক পেশায় চিকিৎসক নাগেন্দ্র বলেন, “আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা ছিল এবং তিনি রিপোর্টের অপেক্ষাও করছিলেন। আমরা ডাক্তার হয়েও তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে একটাও বেড পেলাম না। স্রেফ রিপোর্ট না থাকার কারণে কোনও হাসপাতালই ভর্তি নিল না।” ২ দিন আগেই মৃত চিকিৎসকের বাবাও করোনায় মারা গিয়েছেন। এমনকি তাঁর স্ত্রী এবং পুত্রেরও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ। জামাইবাবুর মৃত্যু এবং এমন কঠিন পরিস্থিতি সাহায্য না পেয়ে চিকিৎসক নাগেন্দ্র ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, “ডাক্তারের পরিবার বলেই এই পরিণতি হল। এর থেকে শ্রমিক হওয়া ভাল ছিল।”