নয়াদিল্লি: কূলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ডের সাজার প্রতিবাদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঐকমত্যের ছবি দেখা গেল মঙ্গলবার। এদিন সংসদে পাকিস্তানের প্রতি কড়া বার্তা দেন সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ। শোনা যায়,  বিদেশমন্ত্রী লোকসভায় কূলভূষণ নিয়ে বিবৃতি দিয়ে নিজেই কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের কাছে গিয়ে তাঁকে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করতে বলেন, যার ওপর উভয় কক্ষেই আলোচনা হতে পারে। তারুরও দলনেতার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তাতে সম্মতি দেন। পাশাপাশি তিনি চরবৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় নাগরিকের পাকিস্তানে চরম সাজা হওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জে যাওয়ার পরামর্শ দেন কেন্দ্রকে। যদিও পরে তারুরকে খসড়া লিখতে বলার খবর অস্বীকার করে সুষমা ট্যুইট করেন, আমার মন্ত্রকে মেধার খামতি নেই। এসব করার অনেক উপযুক্ত সচিব আছেন আমার।

সংসদের বাইরে তারুর সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তানের কাছ থেকে আমরা কী চাই, সেটা ওদের দ্বিপাক্ষিক স্তরে জানিয়ে দিতে হবে। ভারতের এ ব্যাপারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আশা করব, পাকিস্তানকে আমরা জোরদার আন্তর্জাতিক মহল থেকে প্রবল চাপ দিতে পারব। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আইন ভাঙছে, ওই আইন সব দেশকে নিরাপদ রাখে। কূলভূষণকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়ে তারুর বলেন, কেন্দ্রের উচিত পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তোলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষত রাষ্ট্রপুঞ্জকে সামিল করা।

সুষমা এদিন পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দেন, কূলভূষণের ফাঁসি হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এদিন সংসদে সব দলই কূলভূষণের সাজার তীব্র নিন্দা করে তাঁকে বাঁচাতে সব ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আবেদন করে। বিদেশমন্ত্রী সংসদের দুই কক্ষেই বিবৃতি দিয়ে জানান, কূলভূষণ নিরপরাধ অপহৃত ভারতীয়। তাঁর ন্যায়বিচারের জন্য দরকার হলে প্রচলিত পথের বাইরে হাঁটবে ভারত। পাকিস্তান কূলভূষণের ফাঁসি দিলে তা পূর্বপরিকল্পিত হত্যা বলেই দেখা হবে, সেদিকে এগলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কী পরিণতি হবে, সেটা যেন পাকিস্তান ভেবে দেখে।



কূলভূষণের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ 'সাজানো', অতএব তাঁর বিচারও 'প্রহসন' বলে কটাক্ষ করেন সুষমা। বলেন, পরিষ্কার করেই বলছি, বৈধ বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই এবং আইন, ন্যায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়মবিধির তোয়াক্কা না করে এক নিরপরাধ ভারতীয়কে পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকার ও দেশবাসী এটাকে গভীর গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কূলভূষণ অন্যায় করেছেন, এমন কোনও প্রমাণই নেই। পাকিস্তানের সন্ত্রাসে মদত, পৃষ্ঠপোষকতার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সেখান থেকে আন্তর্জাতিক মহলের নজর ভারতের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ছক কষেছে পাকিস্তান। কূলভূষণ তার শিকার হয়েছেন।

রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ আবেদন করেন, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কূলভূষণকে উপযুক্ত আইনি সহায়তা দেওয়া হোক। সুষমা বলেন, কূলভূষণ শুধু তাঁর বাবা-মায়েরই নন, ভারতের সন্তান। তাঁর হয়ে লড়তে যাতে পাক সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে সেরা আইনজীবীর ব্যবস্থা করা যায়, শুধু সেটাই সুনিশ্চিত করা হবে না, বিষয়টি পাক প্রেসিডেন্টের কাছেও তুলবে ভারত সরকার। যা যা প্রয়োজন, সব আমরা করব।
লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও জানান, কূলভূষণ যাতে ন্যায়বিচার পান, সেজন্য যা যা করা সম্ভব, সব করা হবে। পাকিস্তান কোনও আইন, নীতি-নৈতিকতা মানে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।