নয়াদিল্লি: পড়াশোনার জন্য গোছা গোছা পাতা জেরক্স কে না করে থাকে? ক্লাস যত উঁচু হয়, তত বাড়ে জেরক্সের দোকানে যাতায়াত। সেই জেরক্স কপিরাইট আইন ভাঙছে অভিযোগ করে আদালতের দ্বারস্থ হয় ৩টি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা। কিন্তু আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে জেরক্স নিয়মসিদ্ধ আর কপিরাইট স্বর্গীয় কোনও নিয়ম নয়, যা লঙ্ঘন করা যাবে না।


২০১২-র অগাস্টের ঘটনা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস ও টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিসের মত ৩টি নামি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা একসঙ্গে আদালতে যায় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের জেরক্স দোকান রামেশ্বরী ফটোকপি সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে। তাদের বক্তব্য ছিল, ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে তাদের প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের গোছা গোছা পাতা ওই দোকান থেকে জেরক্স করাচ্ছেন, তাতে ১৯৫৭-র ভারতীয় কপিরাইট আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে। কারণ ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনও জিনিস কপি করার অধিকার শুধু তার কপিরাইটধারীর হাতেই আছে।

কিন্তু দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি রাজীব সহায় এন্ডল রায় দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের জেরক্স দোকানটির পক্ষে। তাঁর বক্তব্য, কপিরাইট এমন কোনও অলঙ্ঘ্য অধিকার নয় যা যে কোনও মূল্যে বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা হল গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অধিকার। সব ছাত্রছাত্রীর পক্ষে মোটা টাকা দিয়ে বই কেনা সব সময় সম্ভব নয়। ফলে শিক্ষার স্বার্থে ছাত্রছাত্রীদের জেরক্স করার অধিকার বজায় রাখতে হবে।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ও স্বাভাবিকভাবেই সমর্থন করে রামেশ্বরী জেরক্স দোকানকে। তাদের বক্তব্য ছিল, বইয়ের পাতা জেরক্স করা ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে শিক্ষাগত কারণে জরুরি। একে কপিরাইট লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে আখ্যা দিলে ভুল হবে। কপিরাইট আইনেও শিক্ষার কারণে বইয়ের পাতা কপি করাকে আইনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।

এবার আদালতও ছাত্রছাত্রীদের জেরক্স করার অধিকার সমর্থন করে জানিয়ে দিল, আন্তর্জাতিক দুনিয়া যাই বলুক, তারা সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার অধিকারের ওপর কপিরাইটের খুঁটিনাটি চাপিয়ে দেবে না।