নয়াদিল্লি: দশম শ্রেণিতে পেতে হবে ৭৫% নম্বর। আর ৮৫% নম্বর পেতে হবে দ্বাদশ শ্রেণিতে। সেই মার্কশিট নিয়ে পুরসভা থেকে ফর্ম তুলে জমা দিলেই স্কলারশিপ দেবে মোদী সরকার। দশম শ্রেণির জন্য দশ হাজার আর দ্বাদশ শ্রেণির জন্য  পঁচিশ হাজার টাকার। পরীক্ষার ফল প্রকাশের এই মরসুমে এমন একটি বার্তা হু-হু করে ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তা নিয়েই ত্রাহি ত্রাহি রব দিল্লির প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে।


কারণ অনেক রাজ্য থেকে খবর আসছে, মার্কশিট হাতে নিয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী পৌঁছে যাচ্ছেন পুরসভার দফতরে। রাজ্য থেকে বিজেপি নেতারাও ফোন করে দিল্লিতে দলের নেতৃত্বের কাছে খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সচিবলায়ের তো মাথায় হাত! সরকারের দু’বছর পূর্তিতে দেশ জুড়ে ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে বটে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রীরাও দৌড়চ্ছেন দেশের কোনায় কোনায়। তা বলে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ভাল ফল করলে স্কলারশিপ! এমন  ঘোষণা তো প্রধানমন্ত্রী কোনও দিন করেননি।

তা হলে এমন খবর ছড়াল কী করে? দেখা গিয়েছে, এমন প্রচার হচ্ছে মূলত ভোটমুখী রাজ্য উত্তরপ্রদেশে। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, এর পিছনে বিরোধীদেরই হাত রয়েছে। মোদী সরকারের নামে ভুয়ো প্রকল্পের প্রচার করে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। যাতে পুরসভায় গিয়ে স্কলারশিপ না পেয়ে মোদীর প্রতিই মানুষের মোহভঙ্গ হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় থানায় গিয়ে এফআইআর-ও দায়ের করেছেন বিজেপি কর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় সূত্রের খবর, এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। এক বার তো প্রচার করা হয়েছিল, মোদী সরকার একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে, যেখানে ফোন করার চার ঘণ্টার মধ্যেই দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে রক্তের বোতল! অথচ গত দু’বছরে এমন কোনও প্রকল্প কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়নি। মহারাষ্ট্র-সহ কয়েকটি রাজ্যে ১০৪ নম্বরে ফোন করলে রক্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তর থেকে গোটা দেশে এমন কোনও প্রকল্প ঘোষণা করা হয়নি। আর এক বার তো পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে প্রধানমন্ত্রী সচিবলায়ের একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট চালানোর চক্রও ধরা পড়েছিল। ‘প্রধানমন্ত্রী আদর্শ যোজনা’ নামে এই ভুয়ো ওয়েবসাইটের নামে ঠকানো হতো সাধারণ মানুষকে।

বিজেপির এক নেতার কথায়, আসলে প্রধানমন্ত্রী গরিবদের জন্য ভূরি-ভূরি প্রকল্প ঘোষণা করছেন। তাতে সমস্যায় পড়ছে বিরোধীরা। তাই মোদী সরকারের নামে সাধারণ মানুষকে এমন ভাবে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, যাতে সেটিকে পুঁজি করে পাল্টা রাজনৈতিক প্রচার চালানো যায়। একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট চালালে সেটি দ্রুত ধরা যায়। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া, হোয়াটসঅ্যাপে এ ধরনের ভুয়ো বার্তা ছড়ালে তার সূত্র ধরা মুশকিল।

ভুয়ো স্কলারশিপ-বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার সময় সেটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে একটি সরকারি ওয়েবসাইটের লিঙ্কও দেওয়া হয়েছে। সেটি হল http://www.desw.gov.in/scholarship। সেই ওয়েবসাইট খুললে দেখা যাচ্ছে, এ ভাবে ঢালাও স্কলারশিপ-প্রকল্পের উল্লেখ সেখানে নেই। সেটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি ওয়েবসাইট, যেখানে প্রাক্তন সেনাকর্মী বা সেনাকর্মীর বিধবাদের প্রোফেশনাল কোর্সের জন্য স্কলারশিপের কথা বলা আছে।