নয়াদিল্লি:কেন্দ্রীয় কৃষি নীতির বিরোধিতায় এখনও অবস্থান-বিক্ষোভে অনড় কৃষকরা। আজ দুপুর ৩টেয় শর্তহীন বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে পঞ্জাবের ৩২টি কৃষক সংগঠনকে চিঠি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরের। দেশে ৫০০-রও বেশি কৃষক সংগঠন রয়েছে। সমস্ত সংগঠনগুলিকে বৈঠকে ডাকতে হবে, পাল্টা দাবি পঞ্জাব কিষাণ সংঘর্ষ কমিটির । পঞ্জাব কিষাণ সংঘর্ষ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুখবিন্দর এস সবহ্রান বলেছেন, দেশে কৃষকদের ৫০০-র বেশি সংগঠন রয়েছে। সরকার মাত্র ৩২ সংগঠনকে আলোচনার জন্য ডেকেছে। বাকিদের সরকার আলোচনায় ডাকেনি। সমস্ত সংগঠনগুলিকে ডাকা না হলে আলোচনায় যাব না।


কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলার আগে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার বাড়িতে বৈঠক। উপস্থিত থাকবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী ছাড়াও থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং সোম প্রকাশ। অন্যদিকে, গত কয়েকদিন ধরেই কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের প্রতিবাদে দিল্লি-হরিয়ানার সিঙ্ঘু ও টিকরি সীমানায় অবস্থান বিক্ষোভ করছেন কৃষকরা। অশান্তির আশঙ্কায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুটি সীমানা। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকা। মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ।

মোদি সরকারের কৃষি আইনের বিরোধিতায় দেশের রাজধানীর উপকণ্ঠে আন্দোলন চালাচ্ছেন হাজার হাজার কৃষক। এরইমধ্যে বারাণসীতে গিয়ে কৃষি আইনের পক্ষে জোরাল সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কৃষি আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে নিশানা করলেন বিরোধীদের। তিনি বলেছেন, আগের সরকারের সময় কৃষকদের এমএসপির নামে প্রতারণা করা হত, এখন তা হয় না, আগে ঋণ মকুবের প্যাকেজ ঘোষণা হলেও তা ছোট কৃষকরা পেতেন না। সে সময় কৃষকদের প্রতারণা করা হত। কিন্তু এখন উত্তরপ্রদেশ থেকে তাজা সবজি লন্ডন যাচ্ছে। ছোট কৃষকরা আইনি সুবিধা পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী যখন কৃষি আইনের সমর্থনে সুর চড়াচ্ছেন, তখন হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের দিল্লিমুখী সীমানায় কৃষকদের বিক্ষোভের আঁচ তত বেড়েছে।

উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারত - কৃষকরা রাস্তায় নামছেন কৃষি আইনের বিরোধিতায়।

ভারতীয় কৃষক ইউনিয়নের নেতা গুরনাম সিংহ বলেছেন, সংবিধানে জনগনের, জনগনের দ্বারা ও জনগনের জন্য শাসনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটা এখন কর্পোরেটদের জন্য, কর্পোরেটদের দ্বারা শাসন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্পোরেটদের জন্যই আইন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ শোষণের শিকার হচ্ছেন।
এই প্রেক্ষাপটেই কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ফের একবার মোদি সরকারকে নিশানা করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী।
মোদি সরকারের উদ্দেশে ট্যুইট করে প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর প্রশ্ন,নাম কৃষি আইন, কিন্তু সব লাভ ধনী বন্ধুদের।কৃষি আইন কৃষকদের সঙ্গে কথা না বলে কী করে তৈরি করা সম্ভব?কৃষকদের কথা না ভেবে কীভাবে কৃষি আইন প্রণয়ন করা যায়?সরকারকে কৃষকদের কথা শুনতেই হবে।

শুধু বিরোধীরাই ন/, নতুন কৃষি আইনের বিরোধিতার চড়া সুর উঠে আসছে বিজেপির জোট শরিকদের মধ্যে থেকেও। আগেই মোদি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এনডিএ-র শরিক অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কৌর বাদল! এবার হুঁশিয়ারির সুর আরেক শরিক আরএলপি-র গলায়। দলের সাংসদ হনুমান বেনিওয়াল বলেছেন, কেন্দ্রের এই কৃষি আইনের বিরোধিতা করছি। অমিত শাহ-কে চিঠি লিখে জানিয়েছি, যদি এই কালাকানুন প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে এনডিএ-র প্রতি সমর্থন থাকবে কি না সেটা ভাবতে হবে।

ঘরে-বাইরে বিজেপির অস্বস্তি বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষি আইন নিয়ে দেশবাসীকে বোঝাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীই! তিনি বলেছেন, নয়া কৃষি আইন কতটা কাজের, তা আগামী দিনে বোঝা যাবে। দশকের পর দশক ধরে ছলচাতুরি করে আসা দলগুলি কৃষকদের বন্ধু নয়। কিন্তু এ বার ছল করে নয়, গঙ্গাজলের মতো পবিত্র ইচ্ছা নিয়ে ময়দানে নামা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টা মিথ্যা কথা বলছে বিরোধীরা।

একদিকে, লাগাতার কৃষক আন্দোলন...আরেকদিকে শাসক-বিরোধী তরজা...।কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে আন্দোলনকারী কৃষকরা দিল্লির গোড়ায়! এর মাঝে নতুন কৃষি আইনের কী ভবিষ্যৎ? সেটাই দেখার।