লখনউ ও বেঙ্গালুরু: আবারও দানা মাঝির কাহিনী। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা এবার উত্তরপ্রদেশ ও কর্নাটকে। উত্তরপ্রদেশের এটাওয়ায় শববাহী গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা না করায় ১৫ বছরের সন্তানের দেহ হাসপাতাল থেকে কাঁধে নিয়ে গেলেন বাবা। এই ঘটনা কোনও একজন তাঁর মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করেন।
পেশায় মজুর উদয়বীর বলেছেন, অসুস্থ ছেলে পুষ্পেন্দ্রর চিকিত্সার জন্য তিনি এটাওয়া সরকারি হাসপাতালে এসেছিলেন। রাজ্যের অন্যতম সেরা বলে পরিচিত এই হাসপাতালে তাঁর ছেলের কোনও চিকিত্সাই হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। চিকিত্সকরা ফিরিয়ে দেন উদয়বীরকে।


দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সমস্যায় ভোগা উদয়বীর হাসপাতাল থেকে কাঁধে ছেলের দেহ চাপিয়ে বেরিয়ে আসেন। পুত্রশোকে দিশেহারা উদয়বীরকে কেউ বলেনি যে, মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য শববাহী গাড়ি নিখরচায় পেতে পারেন তিনি। পরে একটি বাইকে চাপিয়ে ছেলের দেহ বাড়িতে নিয়ে যান তিনি।
জেলার পদস্থ স্বাস্থ্য আধিকারিক ঘটনাকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওই ছেলেকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু একটি বাস দুর্ঘটনায় জখমদের চিকিত্সায় ব্যস্ত ছিলেন চিকিত্সকরা। তাই তাঁরা উদয়বীরকে তাঁর ছেলের দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি। নিজেদের ত্রুটি মেনে এই ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন চিফ মেডিক্যাল অফিসার রাজীব যাদব।


একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে কর্নাটকেও। তিন বছরের সন্তানের দেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বাইকের আসার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হল এক ব্যক্তিকে। তাঁকেও নিখরচায় অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার কথা বলা হয়নি। হাসপাতাল কর্মীরা তাঁকে কোনও সাহায্য করেনি।
সফন রায় নামে ওই ব্যক্তির তিন বছরের সন্তানকে গত রবিবার একটি বাইক ধাক্কা মেরেছিল। আনেকালসের সরকারি হাসপাতালে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সন্তানের দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক পরিচিত ব্যক্তিকে বাইক আনতে বলেন সফন রায়। সেই বাইকের অপেক্ষায় শিশু সন্তানের দেহ কোলে নিয়ে বসেছিলেন তিনি। কোনও এক ব্যক্তি ওই ঘটনা মোবাইলের ভিডিও ক্যামেরায় তুলে নেন। সেই ভিডিও স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলিতে প্রচারিত হওয়ার পর পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। এর পর সাদা কাপড়ে মুড়ে ওই শিশুর দেহ বাড়িতে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়।
গত বছরের আগস্টে ওড়িশার দানা মাঝি হাসপাতাল থেকে মৃত স্ত্রীর দেহ কাঁধে তুলে বাড়ি নিয়ে যাওয়াক জন্য প্রায় ১০ কিমি হেঁটেছিলেন। সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সারা দেশে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু অবহেলা, সংবেদনশীলতার অভাব যে একই রয়ে গিয়েছে তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই দুই ঘটনা।