জম্মু: ৯ বছরের খুশবুর টানা ১৮ দিন চোখে ঘুম নেই। বেশিরভাগ সময়টাই কাঁদে। নাহলে বিহ্বল চোখে তাকিয়ে থাকে। খিদেতেষ্টাও  ভুলতে বসেছে একরত্তি মেয়েটি। মাঝরাতে হঠাত্ করেই বিছানা ছেড়ে উঠে কাঁদতে কাঁদতে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওকে সামাল দেওয়ার জন্য খুশবুর বাবা-মাও চোখের পাতা এক করতে পারেন না।
খুশবু জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বা জেলার পাক সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।
সীমান্তে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গুলি চালানো ইদানিং প্রায় নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে ভারতীয় বাহিনীও।  সাম্বায় সীমান্তের ওপার থেকে পাক হামলায় খুশবুর গ্রামের ছয় জনের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু-ধ্বংসলীলা তার নিজের চোখে দেখেছে খুশবু। গত ১ নভেম্বর সে ও তার বাড়ির লোকেরাও অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। পাক বাহিনীর এলোপাথাড়ি শেল, গুলিবৃষ্টির হাত থেকে কোনওক্রমে রক্ষা পায় তারা। কিন্তু সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি থাবা গেড়ে বসে রয়েছে খুশবুর মনে। অস্থির করে দিয়েছে ওকে। মা ভেবেছিলেন, সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে মেয়ে। কিন্তু কোথায় কী! অবস্থা বরং দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। তাই জম্মুর মানসিক রোগ হাসপাতালে খুশবুকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় মাকে।
হাসপাতালে খুশবুর চিকিত্সা করছেন ড. রাকেশ বানাল। তিনি বলেছেন, সীমান্তে গুলি বিনিময়ের ফলে সংলগ্ন এলাকার লোকজন চোখের সামনে দেখছেন মৃত্যু আর ধ্বংস। এরফলে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত হচ্ছে।
শুধু খুশবুই নয়, আর এস পুরা সেক্টরের বাসিন্দা বছর ৩২-র মুকেশেও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। হাসপাতালে চলছে তাঁর চিকিত্সাও। মুকেশের ঘুম হয় না, বুক ধড়ফড় করে। তিনি বলেছেন, আমি ঘুমোতে পারি না। একটু শব্দ কানে এলেই বুকটা ধড়ফড় করে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সংঘাতপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের ৮ শতাংশই মানসিক রোগের শিকার। তাঁরা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসওর্ডারে ভোগেন।
জম্মুর মানসিক রোগ হাসপাতালের প্রাক্তন প্রধান জগদীশ থাপ্পা বলেছেন, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিশেষ করে রোগীরা আসছে।
থাপ্পা আরও বলেছেন, শিশুরা যদি হিংসা, গোলাগুলি দেখে তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা বন্দুক নিয়ে খেলে। এটা একটা মানসিক সমস্যা। এটা আমি কাশ্মীরেও দেখেছি।
তিনি বলেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের মধ্যে উত্কন্ঠা, আতঙ্ক, বুক ধড়ফড় করা, বিরক্তি, খিদের অভাব, ঘুম না আসার মতো সমস্যা দেখা যায়। এই সব লক্ষ্মণ প্রকট হওয়ার আগে চিকিত্সা করালে রোগ সারানো যেতে পারে।