তিরুঅনন্তপুরম: ৭৭-তম ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের উদ্বোধন করে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে জোর সওয়াল করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, সংশয়, পাল্টা মত প্রকাশ, যুক্তি-মেধার সাহায্যে তর্ক-বিতর্ক করার স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের আবশ্যিক স্তম্ভ হিসাবে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। কোনও কিছুই যেন আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, যুক্তির পরিসরের বাইরে পড়ে না থাকে। বিশেষ করে ইতিহাসের মতো বিষয়ের ক্ষেত্রে এ ধরনের স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


ইতিহাসের প্রতি যত দূর সম্ভব বস্তুনিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলতেও ইতিহাসবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।


বহুত্ববাদ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত বৈচিত্র্যই ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি বলে জানান তিনি। বলেন, অসহশীল ভারতীয় নয়, তর্কবাগীশ ভারতীয়কে স্বীকৃতি দেওয়াই ভারতের বরাবরের ঐতিহ্য।


রাষ্ট্রপতির কথায়, সময়ে সময়ে দেশে একটা ‘দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা’ দেখা যাচ্ছে। সেটা হল, অতীত বা বর্তমানের সাংস্কৃতিক বা সামাজিক ধ্যানধারণা, প্রতিষ্ঠানের পরিপন্থী মনে হলেই কোনও মতের প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখানো। একই ভাবে অতীতের নায়ক, জাতীয় আইকনদের সমালোচনাও সহজ ভাবে গ্রহণ না করে বিদ্বেষ এমনকী হিংসা দিয়ে মোকাবিলা করা হয়। যুক্তিবাদ ও আধুনিক মানসিকতা গ্রহণের পক্ষে সওয়াল করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশকে কেউ ভালবাসবেন, তার অতীতে গৌরবের উপাদান খুঁজে পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশপ্রেম যেন ইতিহাসের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ‘একদেশদর্শী’ মানসিকতার জন্ম না দেয়, নিজের পছন্দের মতকে যুক্তিসিদ্ধ বলে দেখাতে সত্যের সঙ্গে আপস করা না হয়।


রাষ্ট্রপতির কথায় কোনও সমাজই পুরোপুরি নির্ভূল নয়। অতীতে কী ভুল হয়েছে, কোথায় ঘাটতি, গলদ, দুর্বলতা ছিল, তাকে বুঝতে ইতিহাসকে গাইড হিসাবেও দেখা উচিত। ইতিহাসের বস্তনিষ্ট অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজন নিরপেক্ষ মনের। অপ্রচলিত মত, ভাবনাকে গ্রহণ করার জন্য চোখ-কান খোলা রাখতে হবে আমাদের।