নয়াদিল্লি: ২৬শে জানুয়ারি তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ট্রাক্টর মিছিলকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন হিংসা, অশান্তির সাক্ষী হয়েছে রাজধানী। তা নিয়ে বিতর্ক চরমে। শান্তিপূর্ণ কায়দায় প্রায় ২ মাসেরও বেশি চলা অবস্থান-বিক্ষোভ কী করে ট্রাক্টর মিছিলের কর্মসূচিতেই অশান্ত চেহারা নিল, সেই প্রশ্ন উঠছে। দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে কোনও কোনও মহলের দাবি, তারাই আন্দোলন চলাকালে গণ্ডগোল হতে দিয়েছে, যাতে আন্দোলনেরই বদনাম করা যায়। এই প্রেক্ষাপটেই এবার আন্দোলনরত কৃষকদের উদ্দেশে উত্তরপ্রদেশ সরকারের নির্দেশ, প্রতিবাদ কর্মসূচি তুলে নিয়ে গাজিপুর সীমান্ত আজ রাতেই খালি করে দিতে হবে তাদের। প্রচুর সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে। কিন্তু কৃষকরা তা শুনতে নারাজ। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি বুক পেতে বুলেট নিতে তৈরি, কিন্তু আন্দোলন ছেড়ে সরে যাবেন না। টিকরি ও কৃষকদের অবস্থানের আরেক কেন্দ্রভূমি সিঙ্ঘু সীমান্তেও তীব্র উত্তেজনা রয়েছে। সেখানেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কয়েকটি সূত্রের দাবি, পুলিশ রাস্তা খুঁড়ে জেসিবি মেশিন নামিয়ে।
রাকেশের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট শান্তিপূর্ণ অবস্থানে সায় দিয়েছে। গাজিপুর সীমান্তে কোনও অশান্তি, হিংসা ঘটেনি। তা সত্ত্বেও সরকার আক্রমণাত্মক, দমনপীড়নের নীতি নিয়েছে। এটাই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের চেহারা। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখপাত্রটি বলেছেন, আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাব। সরব না। প্রশাসন জল, বিদ্যুতের মতো মৌলিক পরিষেবাগুলি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা আমাদের গ্রাম থেকে জল পাব। কেন্দ্রীয় সরকার চাষিদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গাজিপুর সীমান্ত ২৬ নভেম্বর থেকে সিল করা রয়েছে। সেদিন থেকেই দিল্লি চলো কর্মসূচি শুরু হয় কৃষকদের। মঙ্গলবার সেই ব্য়ারিকেড ভেঙে ট্রাক্টর মিছিল করেন চাষিরা।


পাশাপাশি প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী কেরলে নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ওয়েনাড়ের কালপেট্টায় কৃষি বিল নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে দেশের সব চাষি আইনগুলি গভীর ভাবে বুঝতে পারলে দেশে এতদিনে আগুন লেগে যেত বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, সত্যিটা হল, অধিকাংশ কৃষকই তিনটি কৃষি বিল সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝেন না। বুঝলে সারা দেশে আন্দোলন শুরু হয়ে যেত, দেশে আগুন জ্বলত। গত পরশু প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক অশান্তি, হিংসা ছড়ায়। অভিযোগ, পূর্বনির্ধারিত রুটে না গিয়ে কৃষকরা রাজধানীর নানা জায়গায় ঢুকে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাদের। পুলিশ লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীদের একাংশ লালকেল্লায় ঢুকে পড়ে স্বাধীনতা দিবসের দিন যেখানে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা তোলেন, সেখানে ঢুকে পড়ে, নিজেদের ধর্মীয় নিশান টাঙিয়ে দেন। গোটা ঘটনায় প্রজাতন্ত্র দিবসের গরিমা বেশ খানিকটা ম্লান হয়। রাহুল সেদিনও বলেছিলেন, হিংসায় সমস্যার সমাধান হয় না। সরকারকেও দেশের স্বার্থে আইনগুলি বাতিলের আবেদন করেন তিনি। গত বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে অসংখ্য কৃষক, যাঁদের বেশিরভাগই পঞ্জাব, হরিয়ানার, দিল্লি ঢোকার একাধিক পয়েন্টে অবস্থান-বিক্ষোভে সামিল হয়েছে। বাছাই করা কিছু ফসলের ওপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) গ্যারান্টি নয়া আইন চালু হওয়ায় বাতিল হয়ে যাবে,তাদের বড় কর্পোরেটদের দয়াদাক্ষিণ্যে থাকতে হবে বলে দাবি করে কৃষকরা আওয়াজ তুলেছে, তিনটি আইনই বাতিল হোক।
রাহুল ট্যুইটও করেন, কোনও একটা পক্ষ বেছে নেওয়ার সময় হয়েছে। আমার সিদ্ধান্ত একেবারে স্পষ্ট। আমি গণতন্ত্রের সঙ্গে থাকছি, কৃষকদের ও তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশে রয়েছি।