নয়াদিল্লি: রাজধানীতে চলতি হিংসার জন্য কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলল কংগ্রেস। স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর ক্ষেত্রে সার্বিক ব্যর্থতার জন্য দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে।
বুধবার দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক বসে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। বৈঠকে শান্তি ও সংহতি বজায় রাখার জন্য প্রশাসনকে মানুষের কাছে পৌঁছতে সক্রিয় করে না তোলার জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ও তাঁর সরকারকে দায়ী করা হয়েছে।
দলের সদর দফতরে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দুই সরকারের চরম ব্যর্থতার কারণেই জাতীয় রাজধানীতে এই দুঃখজনক পরিস্থিতি আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এই হিংসার পিছনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, দিল্লির ভোটের সময়ও এমনটা দেখেছে দেশ। অনেক বিজেপি নেতার উস্কানিমূলক মন্তব্য ভয় ও বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি করেছিল।
সনিয়া বলেছেন, দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী কেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়া উচিত।
ওয়ার্কিং কমিটির গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দিল্লিতে যা ঘটছে, তা কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যর্থতা। এজন্য পুরো দায় কেন্দ্র ও বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র্মন্ত্রীর। এজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলছি।


সনিয়ার সভাপতিত্বে এই বৈঠকে ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, প্রবীণ নেতা একে অ্যান্টনি, গুলাম নবি আজাদ, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী, জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতা। যদিও বিদেশে থাকার কারণে বৈঠকে ছিলেন না রাহুল গাঁধী।
কংগ্রেস বলেছে, গত রবিবার থেকে যে ঘটনা ঘটছে তার একটা ইতিহাস, নকশা ও ধাঁচ রয়েছে। দিল্লির ভোটের সময়ই তা স্পষ্ট হয়েছিল। বিজেপির বহু নেতাই উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন আতঙ্ক ও ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করতে। গত রবিবারও এমন কিছু মন্তব্য করা হয়, যখন বিজেপির এক নেতা তিনদিন সময়সীমা দিয়ে দিল্লি পুলিশকে হুমকি দিয়েছিলেন, তিনদিনের পর আমাদের আর কিছু বলো না।
কংগ্রেস দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে । দলের অভিযোগ, গত ৭২ ঘন্টায় নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিশ।
কংগ্রেস দিল্লির ঘটনা নিয়ে সরকারের কাছে ছয় দফা প্রশ্নও রেখেছে। তাদের প্রশ্ন, দিল্লি নির্বাচনের পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কি রিপোর্ট দিয়েছিল? এই হিংসার ঘটনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি মতো স্বতঃস্ফুর্ত, না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দাবি মতো এর পিছনে রয়েছে উস্কানি? হিংসা ছড়ানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকা সত্ত্বেও রবিবার রাতে মোতায়েন পুলিশ বাহিনীর শক্তি কতটা ছিল? দিল্লি পুলিশের হাতের বাইরে পরিস্থিতি চলে গিয়েছে স্পষ্ট হওয়ার পরও কেন সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত বাহিনী ডাকা হল না? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোথায় ছিলেন এবং গত রবিবার থেকে তিনি কী করছিলেন? কোথায় ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং গত রবিবার থেকে তিনি কোথায় ছিলেন?
ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাবে পরিস্থিতিকে গুরুতর আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান হয়েছে। কংগ্রেস বলেছে, উপদ্রুত এলাকাগুলিতে যাওয়া উচিত মুখ্যমন্ত্রীর। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা দরকার তাঁর।
কংগ্রেস বলেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অবিলম্বে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা উচিত। প্রতি মহল্লায় সমস্ত ধর্মের মানুষদের নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করা উচিত।
একইসঙ্গে বিদ্বেষের রাজনীতি বর্জনের জন্য দিল্লির মানুষের কাছে আর্জিও জানিয়েছে কংগ্রেস। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুণরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেই আর্জিও জানান হয়েছে।