গুয়াহাটি: জাতীয় নাগরিকত্ব পঞ্জী বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় সিংহভাগ বাঙালির নাম বাদ পড়েছে অভিযোগে রাজ্যসভায় হইচই করল তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদে এসে ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি করেছে তারা। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের দাবি, আতঙ্কের কিছু নেই, যাঁদের নাম বাদ পড়েছে তাঁরা নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ  করার আবার সুযোগ পাবেন।
প্রকাশিত হল অসমের ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস বা এনআরসি-র দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত খসড়া। ৪০ লক্ষ মানুষের নাম এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। অসমের মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ২৯ লক্ষ। তাঁদের মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৬৬৮ জনকে নাগরিক বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। অথৈ জলে পড়েছেন বাকিরা, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ বাঙালি।


[embed]https://twitter.com/ANI/status/1023789293179944960?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1023789293179944960&ref_url=https%3A%2F%2Fabpnews.abplive.in%2Findia-news%2Fassams-final-nrc-draft-out-28983677-people-found-eligible-926228[/embed]

বেলা ৯টা ৪৫ মিনিটে রাজ্যের সব এনআরসি সেবা কেন্দ্র থেকে অনলাইনে মুক্তি পেয়েছে এই এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকত্ব পঞ্জী। এতে যাঁদের নাম উঠেছে তাঁরা স্বীকৃতি পেয়েছেন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে। এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর আগে থেকে যাঁরা এ দেশে রয়েছেন তাঁদের নাম, ঠিকানা ও ছবি ওই তালিকায় রয়েছে। যদি কারও নাম নাগরিকত্ব তালিকায় না ওঠে, তবে তাঁকে নিজের এলাকার এনআরসি সেবা কেন্দ্র থেকে ফর্ম নিয়ে আবেদন করতে হবে। ফর্ম পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানাবে, কেন বাদ পড়েছে তাঁর নাম। ৭ অগাস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেবা কেন্দ্রগুলিতে এই ফর্ম মিলবে। এর পরের পদক্ষেপ হল নিজেকে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক দাবি করে আর একটি ফর্ম পূরণ করা। ৩০ অগাস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিলবে এই ফর্ম। এরপর শুনানির মাধ্যমে সবকটি মামলা মেটানো হবে।



এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অশান্তির আশঙ্কায় কাঁপছে অসম। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরপেটা, দারাং, ডিমা হাসাও, শোণিতপুর, করিমগঞ্জ, গোলাঘাট ও ধুবড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পুলিশ ও ২২০ কোম্পানি নিরাপত্তা বাহিনীতে ছেয়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন, অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন সতর্ক থাকতে ও যাঁদের নাম খসড়ায় ওঠেনি তাঁদের সাহায্য করতে। তাঁর দাবি, এই খসড়ায় নাম না উঠলেও প্রকৃত নাগরিকদের ভয়ের কারণ নেই, নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের যথেষ্ট সুযোগ পাবেন তাঁরা।

অসমের মানুষের দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ মানুষ এসে রাজ্যের জনঘনত্ব বদলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় এনআরসি বা নাগরিকদের পরিচয় সংক্রান্ত কর্মসূচি। এই রেজিস্টারের প্রথম তালিকা বার হয় গত বছর ৩১ ডিসেম্বর। তাতে রাজ্যের ৩.২৯ কোটি বাসিন্দার মধ্যে তালিকায় নাম তুলতে সক্ষম হন ১.৯০ কোটি বাসিন্দা। বাকি ১.৪০ কোটি মানুষ আজ প্রকাশিত হওয়া দ্বিতীয় তালিকায় নিজেদের নাম তোলার আশায় ছিলেন।