নয়াদিল্লি: আধার নম্বরের সঙ্গে যুক্ত না করায় রেশন কার্ড বাতিল হওয়ার ফলে রেশনের বরাদ্দ খাদ্যশস্য না পেয়ে অনাহারে মারা গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের সিমডেগা জেলার বাসিন্দা ১১ বছরের একটি মেয়ে। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন খাদ্যের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকরা। রেশন কার্ড বাতিল হওয়ার বেশ কয়েক মাস বাদে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্তোষী দেবী নামে হতদরিদ্র ঘরের মেয়েটি মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের সিদ্ধান্ত, রেশন কার্ড আধার নম্বরের সঙ্গে যুক্ত না করলে রেশন দোকান থেকে ভর্তুকি দামে খাদ্যশস্য মিলবে না।

জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে নামে মেয়েটির পরিবার যাবতীয় সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার অধিকারী, কিন্তু রাইট টু ফুড ক্যাম্পেন ও এনরেগা ওয়াচ-এর মতো কয়েকটি এনজিও-র দাবি, সন্তোষীর মা কোয়েলি দেবী ও আরও ১০টি পরিবারের সদস্যদের নাম সংশ্লিষ্ট গ্রাহক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যোগ না হওয়ায়। গত ৬ মাস ধরে সন্তোষীর পরিবার রেশনের খাদ্যশস্য পায়নি। এটা ২০১৩ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একাধিক রায়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে দাবি সমাজকর্মীদের।

তাঁদের বক্তব্য, এটা ঝাড়খণ্ডের চেনা সমস্যা। অধিকাংশ সময় ইন্টারনেট সংযোগ মেলে না, সার্ভার কাজ করে না, টেকনিক্যাল কর্মীরা থাকেন না, ফলে মানুষের আধার কার্ড থাকলেও রেশন কার্ডের সঙ্গে তার সংযুক্তিকরণের কাজ আটকে থাকে।

ওই সমাজকর্মীদের উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, সন্তোষীকে ভরসা করতে হয়েছিল স্কুলের মিড ডে মিলের ওপর। কিন্তু দুর্গাপূজার জন্য স্কুল বন্ধ থাকায় মৃত্যুর আগের প্রায় ৭-৮দিন তাকে কার্যত কিছু না খেয়েই কাটাতে হয়েছে।

যদিও সন্তোষীর মৃত্যুর খবরে রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া, ও অনাহার নয়, মারা গিয়েছে ম্যালেরিয়ায়।

মিড ডে মিল প্রকল্পও বানচাল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে আধার ঘিরে। ২৮ ফেব্রুয়ারির এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি স্কুলে মিড ডে মিলের খাবার পেতে হলেও শিশু পড়ুয়াদের আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ঝাড়খন্ড সরকারের তথ্যে প্রকাশ, ৯০ শতাংশের বেশি রাজ্যবাসীই আধারের আওতায় রয়েছেন। কিন্তু ঘটনা হল, বাইরে পড়ে রয়েছেন সেই মানুষগুলিই যাদের গণবন্টন ব্যবস্থার সুযোগ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যেমন, একা থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, শারীরিক প্রতিবন্ধীরা, এছাড়া সেইসব লোকজন, কোনও না কোনও কারণে যাদের এখনও আধার কার্ড তৈরিই হয়নি।