মুম্বই: পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হয়ে ৬ বছর বয়সি একটি মেয়ের ব্রেন ডেথ হওয়ার পর তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের নজির গড়লেন পেশায় পুলিশের গাড়িচালক বাবা। এই ঘটনায় চিকিৎসকরাও অভিভূত।
এক আত্মীয় জানিয়েছেন, এ মাসের ১৮ তারিখ দুর্ঘটনার কবল পড়ে রিব্যানী নামে মেয়েটি। তার বাড়ি মহারাষ্ট্রের গোন্ডিয়া জেলার দেওরিতে। সে কাকা-কাকিমার সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে তাঁদের বাড়িতে যাচ্ছিল। তাঁরা জল খাওয়ার জন্য থেমেছিলেন। সেই সময় অন্য একটি বাইক ধাক্কা মারে। তিনজনই জখম হন। পথচারীরা সাহায্য করার বদলে ছবি তুলতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ পরে তাঁদের গোন্ডিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক রিব্যানীকে নাগপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে মারাত্মক জখম রিব্যানীর অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়নি।
নাগপুরের হাসপাতালের চিকিৎসক নীলেশ অগ্রবাল জানিয়েছেন, ‘রিব্যানীকে হাসপাতালে আনার পরেই আমরা অস্ত্রোপচার করি। কিন্তু ওর নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছিল না। ওর ব্রেন ডেথ হয়ে যায়। এক সপ্তাহ পরে আমরা ওর বাবা রাধেশ্যাম রাহাঙ্গডালেকে জানাই, রিব্যানীর জীবন দীর্ঘায়িত করার কোনও মানে হয় না। এরপরেই তিনি মেয়ের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার কথা জানান। এ কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। শিক্ষিত লোকজনরাও সাধারণত অঙ্গদান করতে রাজি হন না। কিন্তু উপজাতি অধ্যুষিত জেলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক ব্যক্তি শোকের মুহূর্তেও যে এহেন উদার হৃদয়ের পরিচয় দেবেন, সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। আমি এরকম বাবা-মা আর দেখিনি।’
চিকিৎসক নীলেশ আরও জানিয়েছেন, রিব্যানীর হৃদযন্ত্র পাঠানো হয় ঠানের একটি হাসপাতালে। সেটি এক তিন বছরের মেয়ের শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। লিভার দেওয়া হয় ৪০ বছরের এক ব্যক্তিকে। কিডনি পায় নাগপুরের ১৪ বছরের একটি ছেলে। নাগপুরের একটি হাসপাতালে রিব্যানীর চোখ দান করা হয়েছে।
রাধেশ্যাম বলেছেন, ‘গত বছর স্কুলের ফ্যান্সি ড্রেস কম্পিটিশনে আমার মেয়ে অন্ধ সেজেছিল। ও সেই সময় অঙ্গদানের কথা বলে। ও সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। যখন চিকিৎসকরা বলেন, আমার মেয়ের ব্রেন ডেথ হয়েছে, তখন প্রথমেই আমার মাথায় আসে, ওর শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মৃত নয়। তাই সেগুলোকে কেন বাঁচিয়ে রাখব না? আমার হৃদয় আন্দোলিত হচ্ছিল। কিন্তু চিকিৎসকরা আমার মেয়ের ব্রেন ডেথ হওয়ার কথা জানানোর ১২ মিনিটের মধ্যেই অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নিই। সন্তানরা বাবার নাম পেলেও, তাদের উপর মায়ের অধিকার সবচেয়ে বেশি থাকে। আমার স্ত্রী দেওরিতে ছিল। ওর সঙ্গে ফোনে কথা বলি। ও এককথায় অঙ্গদানের বিষয়ে সম্মতি জানায়। আমার মেয়ের জন্মদিন ৫ মে। আমি চাই, যে মেয়েটি ওর হৃদযন্ত্র পেয়েছে, তার জন্মদিনের সঙ্গে আমার মেয়ের জন্মদিনও পালন করা হোক।’
রিব্যানীর বাবা স্নাতক। মা আরতিও বিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি বি এড-ও করেছেন। মেয়ের অঙ্গদান প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমি দেখেছি, অনেক মানুষ পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছেন। তাই আমি তাঁদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।’
এবারই প্রথম নয়, এর আগেও নজির গড়েন রাধেশ্যাম ও আরতি। তাঁদের সমাজে বিবাহের আগে বাগদানের অনুষ্ঠান দু’পক্ষের বাড়িতেই হয়। কিন্তু এই প্রথা মানতে চাননি রাধেশ্যাম। তিনি বলেন, অযথা সময় ও অর্থ নষ্ট করে লাভ নেই। একটাই অনুষ্ঠান হোক। আরতির পরিবারের লোকজন সে কথা মেনে নেন। এরপর অনেকেই তাঁদের অনুসরণ করছেন। রাধেশ্যামের আশা, তাঁদের দেখে আরও অনেকে অঙ্গদানে এগিয়ে আসবেন।
স্কুলের অনুষ্ঠানে বলেছিল অঙ্গদানের কথা, দুর্ঘটনায় ব্রেন ডেথের পর ৬ বছরের মেয়ের হার্ট, কিডনি, লিভার, চোখ দিলেন বাবা
Web Desk, ABP Ananda
Updated at:
30 Apr 2018 01:22 PM (IST)
ফাইল ছবি
দেশ (nation) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -