নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভারত সফরে আসা ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাকরেঁর বৈঠক। ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, পরমাণু শক্তি ও গোপন, বিধিবদ্ধ নথিপত্রের সুরক্ষা সহ প্রধান প্রধান ক্ষেত্রে ১৪টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হল শনিবার। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যৌথ প্রয়াস জোরদার করতে একমত হয়েছেন দুজনে। ভারত-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও বাড়াতেও সম্মত হয়েছেন।
ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন দুজনে। বৈঠকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট চিনকে ইঙ্গিত করে বলেন, সমুদ্র এলাকাকে আধিপত্য, কর্তৃত্ব খাটাতে ব্যবহার করা চলবে না।
মোদী, মাকরঁ আলোচনায় ঠিক হয়েছে, দুদেশের সশস্ত্র বাহিনী পরস্পরকে লজিস্টিক অর্থাত্ সাজসরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করবে। সুরক্ষিত, গোপন নথি, তথ্য বাইরে প্রকাশ রুখতেও চুক্তিতে সই করেছে দুটি দেশ।
ঘটনা হল, কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের রাফালে জেট যুদ্ধ বিমান সরবরাহের ব্যাপারে ফ্রান্সের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির তথ্য প্রকাশের দাবি মানতে রাজি হচ্ছে না মোদী সরকার। সেই প্রেক্ষাপটেই এই চুক্তি। ২০১৬ সালে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার চুক্তিতে সই করে ভারত, ফ্রান্স। চুক্তি অনুসারে ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান ভারতকে দেবে ফ্রান্স। কংগ্রেসের দাবি, তাদের আমলে এ ব্যাপারে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে যে দাম ঠিক হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি দাম ধরা হয়েছে মোদীর সই করা চুক্তিতে। চুক্তির সব তথ্য প্রকাশ করুক সরকার।
পরে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মাকরেঁর পাশে দাঁড়িয়ে মোদী বলেন, আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এমনিতেই দৃঢ়। ফ্রান্সকে সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিরক্ষা শরিকদের মধ্যে ফেলছি আমরা। দু দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সরঞ্জাম দেওয়া নেওয়ার বোঝাপড়াকে তিনি প্রতিরক্ষা সম্পর্কে সোনালী সময় বলেও মন্তব্য করেন।
পাল্টা ফরাসি প্রেসিডেন্ট দুদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নতুন গুরুত্ব রয়েছে বলে অভিমত জানিয়ে বলেন, ভারত এ ব্যাপারে রাফালে যুদ্ধবিমান কেনার এক সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এক্ষেত্রে অগ্রগতির দিকে নজর রাখছি। আমরা এই চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এটা এক দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যাতে উপকৃত হবে দুপক্ষই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, আমাদের কৌশলগত বোঝাপড়ার মূলে রয়েছে এটি।
মাকরঁ আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের সফল মোকাবিলার বিষয়টি কৌশলগত বোঝাপড়ার মূল কেন্দ্র হতে চলেছে। বলেন, আমরা চাই, ভারত যেমন এখানে আমাদের প্রথম কৌশলগত শরিক, তেমনই ইউরোপে, এমনকী পশ্চিমী দুনিয়ায় আমরা ভারতের প্রথম কৌশলগত সঙ্গী হতে চাই।
মোদী তাঁর বক্তব্যে মন্তব্য করেন, মুক্তি, স্বাধীনতা ও সাম্যের মূল্যবোধের সুর শুধু ফ্রান্সেই নয়, ভারতের সংবিধানের মধ্যেও রয়েছে।