নয়াদিল্লি: চিনা সাবমেরিনের অনধিকার প্রবেশ রুখতে এবার জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থলে সমুদ্রগর্ভে নজরদারি সেন্সরের ‘দেওয়াল’ (সাউন্ড সার্ভেল্যান্স সেন্সর বা সোসাস) বসানোর পরিকল্পনা করছে।


সম্প্রতি, প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, জাপানি সহায়তা নিয়ে সুমাত্রা থেকে ইন্দিরা পয়েন্ট পর্যন্ত সমুদ্রতলে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর অত্যাধুনিক সেন্সর বসাতে চাইছে, যাতে ভারতীয় এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোন বা ইইজি-তে চিনা সাবমেরিন ঢুকতে না পারে।

এমনিতেই ভারতীয় নৌসেনার আধুনিকীকরণে সহায়তা করছে জাপান। নৌ-বিমান ঘাঁটিগুলির আধুনিকীকরণ থেকে শুরু করে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নতুন বৈদ্যুতিন/সিগন্যাল স্টেশনের নির্মাণ প্রকল্প নয়াদিল্লিকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে টোকিও। এবার, চেন্নাই থেকে পোর্ট ব্লেয়ার পর্যন্ত সমুদ্রতল দিয়ে ফাইবার অপটিক ক্যবল পাতার কাজে আর্থিক সহায়তা দিতে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে।



সূত্রের খবর, একবার সম্পূর্ণ হলে এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে থাকা ‘ফিশ হুক’ সোসাস নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। ‘ফিশ হুক’-এর মাধ্যমে দক্ষিণ চিন সাগর এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি-নেভি (প্ল্যান)-এর সাবমেরিন কার্যকলাপের ওপর নজরদারি চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান।

আদতে এই ‘ফিশ হুক আন্ডার-সি ডিফেন্স লাইন’ শুরু হয় ২০০৫ সালে। জাপান থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত রয়েছে। এই পুরো লাইনটি দুটি পৃথক হাইড্রোফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তৈরি। একটি রয়েছে ওকিনাওয়া থেকে কিউশু, অন্যটি ওকিনাওয়া থেকে তাইওয়ান। লক্ষ্য একটাই, পূর্ব চিন সাগর এবং দক্ষিণ চিন সাগরে প্ল্যান-এর কার্যকলাপের ওপর নজরদারি চালানো।

গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের সময় থেকেই এই পরিকল্পনার সূত্রপাত। তারপর ধীরে ধীরে এই বিষয়টি নিয়ে এগিয়েছে নয়াদিল্লি। গত মার্চ মাসে আশিয়ান-গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকেও প্রায় সব দেশই ভারতের এই পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানায়। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান নৌসেনার সঙ্গে মালাবার নৌ-মহড়ার মাধ্যমে সেই পরিকল্পনা ভিত পায়।



বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আধিপত্যের মোকাবিলা করতে ভারতকে এই পদক্ষেপের ভাবনা করতে হয়েছে। সূত্রের খবর, দক্ষিণ চিন সাগরে মার্কিন সাবমেরিনের ওপর নজর রাখতে সমুদ্রগর্ভে ‘গ্রেট ওয়াল’ তৈরি করছে চিন। চিনের এই হাইড্রোফোন মার্কিন সোসাস-এর মডেলের মতোই। ভারতের এই সেন্সর প্রজেক্ট চিনের এই পদক্ষেপের ফলেও হতে পারে।

সোসাস-কে আদতে প্রথমে পাঁচের দশকে তৈরি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উদ্দেশ্য ছিল সাবেক সোভিয়েত সাবমেরিনের ওপর নজরদারি চালানো। এবার ভারতও সেই নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে বলে তথ্যাভিজ্ঞ মহলের ধারনা।

তবে, এখানে একটি সমস্যাও রয়েছে – জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  নিজেদের মধ্যে যে সোসাস ব্যবহার করে, তার ফলে জাপানের সব তথ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকে। তাই বিদেশি রাষ্ট্রকে কতটা নিজেদের সংবেদনশীল ও গোপন তথ্যের প্রবেশাধিকার দেবে, তা  একটা বড় প্রশ্ন।