নয়াদিল্লি: ১৯৯১-এ আর্থিক সংস্কারের লাভের গুড় খেয়েছেন ভারতের ধনীতমরাই। সেই গুড়ের স্বাদ কোটিপতিদের কাছে এতটাই মিঠে যে তাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদন (জিডিপি)-র ১৫ শতাংশ। অক্সফ্যামের নয়া রিপোর্টে এ কথা জানানো হয়েছে। রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে ভারতের অর্থনৈতিক অসাম্যের করুণ চিত্র। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত তিন দশকে ভারতে ধনবৈষম্য এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে ধনীতমদের সম্পদের পরিমাণ পৌঁছেছে দেশের জিডিপির ১৫ শতাংশে। মাত্র পাঁচ বছর আগে এই হার ছিল ১০ শতাংশ। দেশের একের পর এক সরকারের একপেশে নীতির জেরেই আর্থিক সংস্কার সুফল পৌঁছেছে ধনীতমদের সিন্দুকেই। রিপোর্টে বলা হয়েছে, উত্তরাধিকার ও প্রিয়ভাজনদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার পুঁজিবাদ (ক্রনি ক্যাপাটালইজম)-এর হাত ধরে দেশে তৈরি হওয়া সম্পদের বিপুল অংশ নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছেন ধনীতমরা। অন্যদিকে, নিচের সারির মানুষের সম্পদের পরিমাণ আরও কমছে। অর্থাত্, গরিবরা আরও গরিব হয়েছে।
অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সিইও নিশা অগ্রবাল বলেছেন, ১৯৯১-এ আর্থিক উদারীকরণের সময় গৃহীত একাধিক সংস্কার ও পরবর্তীকালে নেওয়া নীতি এই তীব্র অসাম্যের কারণ।
২০১৭-র হিসেব অনুযায়ী ভারতে ধনীতমর সংখ্যা ১০১।
'দ্য ওয়াইডেনিং গ্যাপস:ইন্ডিয়া ইনইকোয়ালিটি রিপোর্ট ২০১৮' শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আয়, ভোগ, সম্পদের মতো মাপকাঠিতে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অসাম্য-যুক্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম।
অক্সফ্যামের রিপোর্টে এই চরম অসাম্যের জন্য একের পর এক সরকারের একপেশে নীতিকেই দায়ী করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এমন কিছু নির্দিষ্ট নীতি নির্ধারিত হয়েছে, যেগুলিতে শ্রমের চেয়ে পুঁজিকেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অদক্ষদের থেকে দক্ষ শ্রমিকদেরই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
রিপোর্টে ১৯৮০-এর দশকের থমকে থাকা অর্থনীতি থেকে ১৯৯১ থেকে ভারতের উত্থান, তার পরবর্তী এবং ২০১৭ পর্যন্ত চলতি অগ্রগতির পথে অসাম্যের হার কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তার বিবরণ এবং বিভিন্ন সূত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
রিপোর্টের লেখক অধ্যাপক হিমাংশু বলেছেন, ভারতের পক্ষে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল যে, আর্থিক অসাম্যের এই শিকড় এমন একটি সমাজে যুক্ত হয়েছে যা এমনিতেই জাত, ধর্ম, অঞ্চল ও লিঙ্গ ভেদ অনুযায়ী বিভক্ত। নৈতিক দিক ছাড়াও ভারতের গণতন্ত্রের কার্যকারিচার পক্ষেও অসাম্যের এই হারে লাগাম টানা খুবই জরুরি।
অগ্রবাল বলেছেন, অসাম্যের এই প্রবণতায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের একমাত্র পথ হল প্রগতিশীল প্রত্যক্ষ কর আরোপের মাধ্যমে কর সংগ্রহ বৃদ্ধি। এক্ষেত্রে সম্পদ ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে কর আরোপ করতে হবে এবং প্রাপ্ত অর্থ দরিদ্রদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টির জন্য ব্যয় করতে হবে।
উল্লেখ্য, দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকের আগে ইন্টারন্যাশনাল রাইটস গ্রুপ অক্সফ্যামের রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, গত বছর ভারতে যে পরিমাণ সম্পদ তৈরি হয়, তারমধ্যে ৭৩ শতাংশই নিজেদের দিকে টেনেছে দেশের জনসংখ্যার ধনীতম ১ শতাংশ।