নয়াদিল্লি: আইএসআইএসের হাতে বন্দি থাকতে হয়েছে প্রায় ২ বছর। মুক্তির পরেও ভারতীয় চিকিৎসক কে রামমূর্তিকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে আতঙ্ক। তিনি জানাচ্ছেন, আইএস জঙ্গিরা তাঁকে জোর করে অত্যাচার, খুনের ভিডিও দেখতে বাধ্য করে, তিন তিনবার গুলি চালায় তাঁর ওপর। ১৮ বছর লিবিয়ায় কাজ করার পর রামমূর্তি এখন অন্ধ্রপ্রদেশে নিজের গ্রামে ফেরার প্রতীক্ষা করছেন।


রামমূর্তি জানিয়েছেন, আইএস জঙ্গিরা অশিক্ষিত নয়, তারা রীতিমত শিক্ষিত যুবক। ভারত সম্পর্কে ভীষণ আগ্রহ তাদের। তারা চায়, এ দেশ দখল করতে, এ দেশে ছড়িয়ে দিতে তাদের চিন্তাভাবনা। ভারতের অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রয়েছে তাদের।

রামমূর্তিকে আইএস জঙ্গিরা প্রশ্ন করত ভারতের উন্নয়ন সম্পর্কে। কীভাবে শিক্ষা, অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভারত উন্নতি করেছে, তা জানতে চাইত তারা। রামমূর্তি জানিয়েছেন, আইএস চায়, ভারত সহ বিশ্বের সব দেশে তাদের চিন্তাধারা ছড়িয়ে দিতে। তাই এ দেশের খুঁটিনাটি সম্পর্কে তাদের এত কৌতূহল।



তাঁর ওপর শারীরিক অত্যাচার করেনি আইএস। কিন্তু মানসিক নির্যাতন চলত। অকথ্য গালাগালি সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে, বলা হয়েছিল, তাদের হাসপাতালে সার্জারি করতে। ইরাক, সিরিয়া, নাইজিরিয়া সহ নানা দেশে তারা যেভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, সেই ভিডিও দেখতে বাধ্য করা হত তাঁকে ও অন্যান্য বন্দিদের। সেই অত্যাচার চোখে দেখা শক্ত ছিল।

তারা যখন তাঁকে হাসপাতালে সার্জারি করতে বলে, রামমূর্তি বলেন, তাঁর ৬১ বছর বয়স। পিঠে ব্যথা আছে, ডান পায়ে স্নায়ুঘটিত রোগ আছে। ১৫ মিনিটের বেশি একটানা দাঁড়াতে পারেন না তিনি। তা ছাড়া অস্ত্রোপচার করার প্রশিক্ষণ নেই তাঁর, তিনি রোগীর চিকিৎসা করতে পারেন শুধু। তাই তারা তাঁকে এক জেল থেকে বার করে অন্য জেলে নিয়ে গিয়ে রাখে।

রামমূর্তি জানিয়েছেন, আইএস জঙ্গিরা বেশিরভাগই যুবক। ১০ বছরের ছেলেকেও আত্মঘাতী জঙ্গি হতে দেখেছেন তিনি। আবার ৬৫-র বেশি বয়স্ক জঙ্গিও আছে।

গত বছর রমজানের সময় তাঁকে তিনবার গুলি করে আইএস। বাঁ হাতে আর দু’পায়ে গুলি লাগে। আইএসআইএস-এর হাসপাতালেই চলে চিকিৎসা। আইসিইউয়ে থাকতে হয় ৩ সপ্তাহ। সে সময় লিবীয় সেনার সঙ্গে আইএসের তুমুল লড়াই চলছিল। একবার যখন সেনা তাঁদের ঘাঁটির কাছাকাছি চলে আসে, তখন তিনি ও আর ৪০জন বন্দি ফ্রিডম বলে চিৎকার করতে থাকেন। সেনাই শেষ পর্যন্ত মুক্ত করে তাঁদের।

রামমূর্তি জানিয়েছেন, আইএসআইএসের কাছে এত শক্তিশালী সুইসাইড বেল্ট আছে, যাতে একবার ফেটে গেলে মারা যেতে পারেন অন্তত ১০০জন। তাঁর সঙ্গে ক্যাম্পে কাজ করতেন আর এক চিকিৎসক। সেনা এসে পৌঁছনোর আগেই আত্মহত্যা করেন তিনি।

নিজের মুক্তির জন্য রামমূর্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সহ ভারতীয় দূতাবাস কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের জন্যই আইএসের খপ্পর থেকে বার হতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।