নয়াদিল্লি: ভারতের অর্থনীতি গত তিন বছরে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে বলে জানালেন অরুণ জেটলি। ভারতীয় অর্থনীতি শক্ত জমির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং তার মৌলিক বুনিয়াদের ভিতও খুব দৃঢ় বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। জানান, সামনের বছরগুলিতেও উচ্চ বৃদ্ধির হার ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।


মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে দেশের অর্থনীতির হাল-হকিকত নিয়ে কথা বলেন তিনি।

জেটলির পাশাপাশি সেখানে কেন্দ্রীয় আর্থিক বিষয়সংক্রান্ত সচিব এস সি গর্গ বলেন, ২০১৪ সাল থেকে মুদ্রাস্ফীতি ধারাবাহিক ভাবে কমছে। চলতি অর্থ বছরে তা ৪ শতাংশ ছাড়াবে না। দেশের অর্থনীতির গোড়ার অবস্থার ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এ বছর কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ঘাটতি ২ শতাংশের কম থাকবে, বিদেশি বিনিময় মুদ্রার ভান্ডারও ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

আর্থিক ঘাটতি সম্পর্কে তিনি জানান, সরকার চলতি অর্থবর্ষে ঘাটতি জিডিপি-র ৩.২ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্যে অটল রয়েছে, তবে ডিসেম্বরেই এ ব্যাপারে রিভিউ করা হবে। জিডিপি বৃ্দ্ধির গতি হ্রাসের মোকাবিলা করা হয়েছে এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে দাবি করে গর্গ জানান, শীঘ্রই ভারত ৮ শতাংশ বৃদ্ধির হার অর্জন করবে বলে সম্প্রতি আশা প্রকাশ করেছে আইএমএফও।

পাশাপাশি বর্তমান অর্থবর্ষে ৭২৫০০ কোটি টাকার বিলগ্নিকরণের টার্গেট ছাড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সরকার আশাবাদী বলেও জানান গর্গ।

পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অর্থসচিব অশোক লাভাসা তথ্য দেন, বর্তমান অর্থবর্ষের জন্য বাজেটে মোট ২১.৪৬ লক্ষ কোটি টাকার যে সংস্থান রাখা হয়েছিল, তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত সরকারের খরচ হয়েছে ১১.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা। মূলধনী ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩.০৯ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১.৪৬ লক্ষ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই ব্যয় হয়েছে।

জিএসটি-কে কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী গব্বর সিং ট্য়াক্স বলে কটাক্ষ করায় পাল্টা জেটলি বলেন, যারা টুজি, কয়লা কেলেঙ্কারি করতে অভ্যস্ত, তাদের তো ন্যায্য কর দিতে অসুবিধা হওয়ারই কথা! বিরোধী দলগুলির ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের বর্ষপূর্তির দিন 'কালা দিবস' পালনের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ থেকে নগদনির্ভর অর্থনীতিতে ওদের আস্থাই ফুটে উঠছে। সরকারের কিন্তু এ ব্যাপারে অত্যন্ত পরিষ্কার মত, অর্থনীতিতে নগদের ব্যবহার কম হওয়া উচিত, কিন্তু বিরোধীরা ভাবছেন, নগদ লেনদেনই বেশি হওয়া ভাল।

সাংবাদিক বৈঠকের পর জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১ জুলাই চালু হওয়া জিএসটি দেশব্যাপী করকে একত্রিত করেছে, পণ্য পরিবহণের ওপর নিয়ন্ত্রণ, বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে সাহায্য করেছে, যার ফলে পণ্যসামগ্রী আনা নেওয়ায় গতি বেড়েছে, একটি একক বাজার গড়ে তোলার সুবিধা হয়েছে, দুর্নীতি, ফাঁকি কমেছে এবং মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচির আরও সুবিধা হয়েছে। আশা করা যায়, এতে রাজস্ব, বিনিয়োগ ও মাঝারি মেয়াদের আর্থিক বৃদ্ধি চাঙ্গা হবে। সরকার ও জিএসটি কাউন্সিলকে গোড়ায় যে সমস্যার সামনে পড়তে হয়েছে, তা সত্ত্বেও রাজস্ব ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে যে ফল মিলছে, তা উত্সাহব্যঞ্জক।

ডজনেরও বেশি কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের লেভি একত্র করে তৈরি জিএসটি-কে ঐতিহাসিক সংস্কার আখ্যা দিয়ে কেন্দ্রের দাবি, এতে শুধু আর্থিক বৃদ্ধিই হবে না, কর ফাঁকিও ঠেকানো যাবে।