কলকাতা: আর বেশি দিন নয়, যখন ভারতকে সামরিক শক্তির দিক দিয়ে টক্কর দেওয়ার ‘দুঃসাহস’ দেখাবে না পাকিস্তান ও চিন!
বিশ্ব-সামরিক মহলে জোর কানাঘুষো, খুব শীঘ্রই এমন এক মহা-শক্তিশালী অস্ত্র ভারতের হাতে আসতে চলেছে, যা পরমাণু না হলেও, পরমাণু অস্ত্রের চেয়ে কম ভয়ঙ্কর নয়।
যে সময় পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের শত্রুতা চরমে, ঠিক তখনই দেশের সামরিক বিজ্ঞানীদের দাবি, খুব অল্পদিনের মধ্যেই কোনও শত্রুদেশের বিমান বা মিসাইল ভারতের আকাশসীমায় ঢুকতেই ভয় পাবে।
কিন্তু কীসের ভিত্তিতে তাঁদের এই দাবি? ভারতের হাতে এমন একটা অস্ত্র এসেছে, যাকে দেখা যায় না! কী সেই অস্ত্র? শক্তির দেবীর নাম অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা ওই অস্ত্রের নামকরণ করেছেন –‘কালি’।
যদিও, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় অস্ত্রটির পুরো নাম হল কিলো অ্যাম্পায়ার লিনিয়ার ইঞ্জেক্টর। বিভিন্ন বিদেশি সামরিক জার্নাল কালি-কে বর্তমানে অন্যতম ভয়্ঙ্কর অস্ত্র হিসেবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে।
এক নজর দেখা যাক কালি-র কার্যকারিতা—
কালি-কে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, সেটি কোনও শত্রু বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে সক্ষম। কালি কোনও ক্ষেপণাস্ত্র নয়। এর মধ্যে কোনও বিস্ফোরক নেই! কিন্তু, তা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে।
জানা গিয়েছে, কালি আদতে হল ডিরেক্টেড এনার্জি উইপন (ডিইডব্লু) শ্রেণির অস্ত্র। আদতে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে রিলেটিভিস্টিক ইলেকট্রন বিম (আরইবি) ছোঁড়ে কালি।
এই বিম অনেকটা লেজার বিমের মতো। যা দিয়ে অস্ত্র তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও রাশিয়ার মতো সুপার-পাওয়াররা।
তবে, বিজ্ঞানীদের মতে, লেজারের থেকেও ভয়ঙ্কর কালি। তাঁদের মতে, লেজার রশ্মি সাধারণত, শত্রু-মিসাইল বা বিমানে ছিদ্র করে দেয়। কিন্তু, তা করার জন্য অত্যন্ত সুক্ষ্ম এবং নির্ভুল হতে হবে।
অন্যদিকে, কালি সাধারণত, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রন বিম ‘ফায়ার’ করে থাকে। এক্ষেত্রে ওই ব্যাসের মধ্যে যে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি নিমেষে স্তব্ধ হয়ে পড়বে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, একটি বিমান বা মিসাইল প্রতি সেন্টিমিটারে মাত্র ৩০০ ভোল্ট ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক পাল্স (ইএমপি) ধাক্কা সহ্য করতে পারে। কালি সেই জায়গায় কয়েক হাজার ভোল্ট ইএমপি নিক্ষেপ করে।
ফলত, এত বিপুল মাইক্রোওয়েভ শক্তির ধাক্কার জেরে শত্রুপক্ষের মিসাইল ও বিমানে থাকা অন-বোর্ড কম্পিউটার এবং অন্য সব যন্ত্র অকেজো হলে, তা অচিরেই ভেঙে পড়বে।
এই অস্ত্রটির বিশেষত্ব হল, এই মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ কোনওভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। কারণ, তা ছড়ায় না। যে গতি ওই তরঙ্গকে নিক্ষেপ করা হয়, তাতে সরাসরি লক্ষ্যের ওপর আছড়ে পড়ে কালি।
কালি তৈরি করেছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (ডিআরডিও) এবং ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার (বার্ক)। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন বার্ক অধিকর্তা আর চিদম্বরমের নেতৃত্বে প্রথম শুরু হয়েছিল এই প্রকল্প।
প্রথম অ্যাক্সিলারেটরের ক্ষমতা ছিল ২৫০ মেগাওয়াট। পরবর্তীকালে, আরও উন্নত সংস্করণ বের হয়েছে। ক্ষমতা বেড়েছে কালি-র। কালি ৮০, কালি ১০০, কালি ২০০, কালি ১০০০ এখন অতীত। ২০০৪ সালে কালি ৫০০০-কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বর্তমানে কালি ১০০০০ এর গবেষণা চলছে। জানা গিয়েছে, কালি ৫০০০-এর ক্ষমতা প্রায় ৪০ গিগাওয়াট এবং তার পালস হল ৬০ ন্যানো-সেকেন্ড। তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি বা কম্পাঙ্ক ৩-৫ গিগাহার্ৎজ। অর্থাৎ, প্রতি সেকেন্ডে কয়েক হাজার এমন উচ্চক্ষমতার মাইক্রোওয়েভ নিক্ষেপ করতে সক্ষম কালি। যাতে যে কোনও জায়গায় ভূমিকম্পের মতো শক দেখা দিতে পারে।
তবে, কালি-র একটাই সমস্যা। তা হল, এটি অত্যন্ত ভারি এবং একবার নিক্ষেপ করার পর দ্বিতীয়বার চার্জ নিতে এটি সময় নেয়। জানা গিয়েছে, কালি ৫০০০-এর ওজন প্রায় ১০ টন, কালি ১০০০০-এর ওজন প্রায় ২৬ টন।
ফলে, একে বায়ুসেনার আইএল-৭৬ এর মত ভারি মালবাহী বিমান ছাড়া স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যয় হয়। ঠান্ডা করতে ১২ হাজার লিটার তেল প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা এই ইস্যুগুলির সমাধান করার চেষ্টা করছেন।
পাশাপাশি, তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন, কালি প্রয়োগ করে তেজস বিমানে ‘ইএমপি শিল্ড’ বা বর্ম গড়ে তোলার, যাতে শত্রুদেশ ভারতের বিমান বা মিসাইলে এধরনের মাইক্রওয়েভ অস্ত্র নিক্ষেপ করলে তা যাতে প্রতিহত হয়। একইভাবে দেশের উপগ্রহকেও সুরক্ষিত করতে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে কালি-র।
‘কালি’ নিয়ে ভারতের সাফল্যে রীতিমত আশঙ্কিত পাকিস্তান। এই নিয়ে প্রতিবেশী দেশটি নিজেদের উদ্বেগ চাপা রাখেনি। ২০১২ সালে সিয়াচেনে তুষারধসে ১৩৫ জন পাক সেনা জওয়ান নিহত হয়েছিল। ইসলামাবাদের দাবি, কালি-র জন্যই ওই ধস নেমেছিল। যদিও, ভারত তা অস্বীকার করে।
সম্প্রতি, সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে কালি-র গবেষণার অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। তিনি জানিয়ে দেন, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রকাশ করা হবে না।
পরমাণুর চেয়েও ভয়ঙ্কর অস্ত্র রয়েছে ভারতের! আতঙ্কে পাকিস্তান
Susanta Das, ABP Ananda
Updated at:
03 Oct 2016 04:09 PM (IST)
দেশ (nation) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -