নয়াদিল্লি : পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি বাতিলের পথে হাঁটছে না ভারত। তবে এই চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়ানোরই কৌশল নিয়েছে নয়াদিল্লি। এই চুক্তির আওতায় যে তিনটি নদী থেকে বেশি জল পাকিস্তানকে সরবরাহ করা হয়, সেই তিন নদীর বৃহত্তর ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে ভারত।পশ্চিমমুখী নদীগুলির ২০ শতাংশ জল ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত।এতদিন মাত্র ৮ শতাংশ জল ব্যবহার করা হত।


সাউথ ব্লকে ১৯৬০-এর সিন্ধু চুক্তি পর্যালোচনা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন বলে সূত্রের খবর। তিনি বলেন, রক্ত এবং জল একসঙ্গে বইতে পারে না।

সাউথ ব্লকে বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর, জলসম্পদ দফতরের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।

উরি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানকে সবক শেখাতে সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি বাতিলের দাবি বিভিন্ন মহলে উঠেছে। সিন্ধু জলচুক্তি পাকিস্তানের লাইফ লাইন। এই চুক্তির মাধ্যমে প্রাপ্ত জলের মাধ্যমে পাকিস্তানের একটা বড় অংশ সুজলা-সুফলা।১৯৬০-এ ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ূব খানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। স্থির হয়, শতদ্রু, ইরাবতী, বিতস্তার জল ভারত ব্যবহার করবে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ব্যবহার করবে ঝিলম, সিন্ধু ও চন্দ্রভাগা নদীর জল। পাকিস্তানের এই তিনটি নদীরই উত্সস্থল ভারত। ওদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জল এই নদীগুলি থেকে মেলে।

কূটনৈতিক স্তরে ইসলামাবাদের ওপর চাপ বাড়াতে এই চুক্তি বাতিল করার দাবি উঠেছে। এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করতে সিন্ধু চুক্তি পর্যালোচনার জন্য সাউথ ব্লকে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ঝিলম সহ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত তিন নদীর জলের যতটা সম্ভব বেশি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই চুক্তির বিস্তারিত ও কার্যাবলী জরুরী ভিত্তি খতিয়ে দেখতে একটি মন্ত্রী পর্যায়ের টাস্ক ফোর্সও গঠন করা হয়েছে। সরকারি সূত্রে এ কথা জানা গেছে। বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, সিন্ধু জল কমিশনের বৈঠক একমাত্র ‘সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশে’ই হতে পারে। উল্লেখ্য, এর আগে এই কমিশনের ১১২ টি বৈঠক হয়েছে।
জলবিদ্যুত্, সেচ, জলসঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ওই সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলমের জলের সর্বাধিক ব্যবহারের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি  ১৯৮৭-র তুলবুল নেভিগেশন প্রকল্পের এক তরফা সাসপেনশন পর্যালোচনা করে দেখা হবে বলে বৈঠকে স্থির হয়েছে।
উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা সিন্ধু চুক্তির মাধ্যমে তাঁদের বঞ্চনা করা হয়েছে বলে অতীতে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন। তাঁদের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ওই তিন নদীর জল সেচের কাজে যতটা সম্ভব বেশি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।