নয়াদিল্লি: সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্রত্যাহারের দাবিতে লাগাতার অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এবার ১৬ বছরের অনশন তুলে নিয়ে নির্বাচনে লড়ার রাস্তায় হাঁটবেন বলে জানালেন মণিপুরের মেয়ে ইরম শর্মিলা। আগামী ৯ আগস্ট তিনি অনশন ভাঙছেন বলে তাঁকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। আফস্পাকে ‘দানবীয়’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে অনমনীয় জেদ, প্রতিজ্ঞা, দৃঢ়তা দেখিয়ে লক্ষ্যে অবিচল থাকা ইরমকে ‘লৌহমানবী’ বলে ডাকেন তাঁর প্রিয়জনেরা।


সেই শর্মিলা বলেছেন, সরকার কোনও ইতিবাচক সাড়াই দিচ্ছে না। আমিই অনশন ভাঙছি। তবে দাবি পূরণের জন্য এবার বিধানসভা ভোটে লড়ব। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালেই মণিপুরে নির্বাচন।

মঙ্গলবার স্থানীয় আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। অনশনের মাধ্যমে আফস্পা বাতিল করা যাবে বলে আর তিনি মনে করেন না, একথা বললেও তাঁর লড়াই জারি থাকবে বলে জানিয়ে দেন শর্মিলা। বলেন, সেজন্যই আমি রাজনীতিতে নামব। আমার সংগ্রাম চলবে।

শর্মিলাকে ২০১৪-য় মণিপুর লোকসভা আসন থেকে ভোটে লড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল আমআদমি পার্টি (আপ)। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।

২০০০ সালে ইম্ফল বিমানবন্দরের কাছে এক বাস স্টপে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে ১০ জনের নিহত হওয়ার ঘটনার পর সে বছরের ৪ নভেম্বর থেকে অনশন শুরু হয় শর্মিলার। সেই থেকে তিনি নিজে মুখে কিছু খাবার, এমনকী জলও তোলেন না। ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু হাসপাতালের স্পেশাল ওয়ার্ডে নাকে ঢোকানো টিউব দিয়ে তাঁকে জোর করে খাওয়ানো হয়।

শর্মিলার দাবি, আফস্পা জনবিরোধী। কেননা এতে নিরাপত্তাবাহিনীকে তল্লাসি চালানো ও কাউকে সন্দেহজনক মনে হলেই গুলি চালানোর অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। আর এর সুযোগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ছাড়পত্র পাচ্ছে তারা। তাই এটি বাতিল করতে হবে। লক্ষ্য পূরণে অনশন ন্যয্য হাতিয়ার বলে জানিয়েছেন তিনি। শর্মিলা বলেছেন, মহাত্মা গাঁধীও দাবি পূরণে অস্ত্র করেছেন অনশনকে। কিন্তু সরকার, প্রশাসনের মত, তিনি যা করছেন, সেটা আত্মহত্যার চেষ্টাই। এজন্য তাঁকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় একাধিকবার গ্রেফতার করে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে দোষী নন বলে জানিয়ে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল আদালত। কিন্তু তার মাত্র দু দিন বাদে গত ২ মার্চ তাঁকে ফের গ্রেফতার করা হয়।

 

আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে শর্মিলার দাবি, তিনি আফস্পা বাতিল চান। শর্মিলার আফস্পা বাতিলের দাবি সমর্থন করেছে দেশি-বিদেশি নানা সংগঠন, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত অনেকেও। কিন্তু তাতে সম্মত হয়নি সরকার।