নয়াদিল্লি: বিচারক বি এইচ লোয়ার মৃত্যু সংক্রান্ত মামলা থেকে অব্যাহিত নিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র। সুপ্রিম কোর্টে সাম্প্রতিক অভূতপূর্ব সংকটের মূলে অন্যতম ছিল এই মামলা। বিচারক লোয়া-র রহস্যমৃত্যুর তদন্তের মামলা বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চে পাঠানোয় আপত্তি তুলেছিলেন ৪ প্রবীণ বিচারপতি। ৪ প্রবীণ বিচারপতি জাস্তি চেলামেশ্বর, ক্যুরিয়ান জোসেফ, রঞ্জন গগৈ ও মদন লোকুরের অভিযোগ ছিল, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলাগুলি বেছে বেছে তাঁর পছন্দের জুনিয়র বিচারপতিদেরই দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। এ ব্যাপারে প্রবীণ বিচারপতিদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা প্রধান বিচারপতি মিশ্রের কাজকর্মের ‘স্বচ্ছতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই দ্বন্দ্ব এখনও চলছে। তারই মধ্যে বিচারক লোয়ার মৃত্যু সংক্রান্ত মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র।জানা গেছে, বিচারপতি মিশ্র সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের কাছে এই মামলার শুনানির জন্য একটি নতুন বেঞ্চ গঠনের আবেদনও করেছেন। গতকাল রাতে প্রধান বিচারপতির কাছে এই আবেদন করেন তিনি।
বিচারক লোয়ার মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন তহসিন পুনাওয়ালা ও বন্ধুরাজ শম্ভাজি লোন । সেই মামলার শুনানিও সুপ্রিম কোর্টে সেভাবে এগোয়নি।

এই মামলার যে দুই বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হচ্ছিল তাঁদের মধ্যে একজন বিচারপতি অরুণ মিশ্র। অন্যজন বিচারপতি মোহন এম শান্তনাগৌদর।
গত মঙ্গলবার আট বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠকের সময় বিচারপতি অরুণ মিশ্র আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। তিনি বলেছেন, তাঁকে অকারণেই 'নিশানা' করা হচ্ছে এবং তাঁর 'পারদর্শীতা' নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তাঁকে আশ্বস্ত করে বলা হয়, গত শুক্রবারের বেনজির সাংবাদিক বৈঠকে প্রধান বিচারপতির পর দ্বিতীয় সিনিয়র মোস্ট বিচারপতি চলমেশ্বর তাঁকে নিশানা করেননি।
বিচারক লোয়া মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাতে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল যে, বিচারপতি অরুণ মিশ্র সম্ভবত এই মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবেন।
গতকাল বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি শান্তনাগৌদরের বেঞ্চ মামলার শুনানির দিন এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেন। বেঞ্চ এই মামলা সংক্রান্ত জরুরি নথিপত্র আবেদনকারীদের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
বেঞ্চের নির্দেশ বলা হয়, সমস্ত নথিপত্র সাত দিনের মধ্যে রেকর্ডে রাখতে হবে এবং সেগুলি উপযুক্ত বেঞ্চের সামনে পেশ করতে হবে।
নির্দেশের শেষ লাইন থেকেই ইঙ্গিত মেলে যে, মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র।
চার বছর আগে মৃত্যু হয়েছিল বিচারক লোয়ার। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে মুখ খুলেছে নাগপুর পুলিশ। তাদের দাবি, হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছিল বিচারক লোয়ার। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাকই বলা হয়েছিল। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ভিসেরা রিপোর্টেও বিচারক লোয়ার শরীরে কোনও বিষ পাওয়া যায়নি।

২০১৪-র ডিসেম্বরে নাগপুরে মারা যান সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় সিবিআই আদালতের বিচারক লোয়া। এরপর সম্প্রতি তাঁর পরিবারের লোকজন বিচারক লোয়ার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করায় সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিচারকের পরিবার, বিশেষ করে বাবা ও বোনেরা ঘটনার তদন্ত দাবি করেছিলেন।
কিন্তু এরইমধ্যে গত রবিবার তড়িঘড়ি ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে বিচারক লোয়ার ছেলে অনুজ জানান যে, তাঁর বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক। বিচারকের মৃত্যুর সময় মানসিক বিপর্যস্ত পরিবারের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন আর সন্দেহ নেই। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগও নেই। কোনও তদন্তও চান না।
কিন্তু পরে বিচারপতি লোয়ার এক কাকা দাবি করেন, চাপের মুখে এই কথা বলছেন অনুজ।