নয়াদিল্লি: কলেজিয়াম প্রথা নিয়ে বিরাট প্রশ্নচিহ্ন তুলে কলেজিয়াম বৈঠক ছাড়লেন সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম সিনিয়র বিচারপতি জাস্তি চেলমেশ্বর। তিনি জানিয়েছেন, কলেজিয়ামের প্রথা ও পদ্ধতি চূড়ান্ত অস্বচ্ছ, উচ্চতর আদালতের জন্য বিচারপতি বাছার ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনই যথেষ্ট, প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপত্তি করার সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলেও সংখ্যালঘু মতামতকে কখনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরকে চিঠিও লিখেছেন তিনি।

বিচারপতি নিয়োগ ঘিরে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে বিচারব্যবস্থায় প্রচণ্ড মন কষাকষি চলছে। বিচারবিভাগের দাবি, যথেষ্ট সংখ্যক বিচারপতির অভাবে থমকে গেছে আদালতের কাজকর্ম। কিন্তু বিচারপতিদের নিয়োগের দায়িত্ব পুরোপুরি তাঁদেরই হাতে ছাড়তে নারাজ কেন্দ্র। অসন্তুষ্ট প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যাঁদের নাম সুপারিশ করা হয়েছে, তাঁদের নিযুক্ত না করা হলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু বিচারপতি চেলমেশ্বর জানিয়েছেন, যেভাবে বিচারপতিরা বিভিন্ন উচ্চতর আদালতে বিচারপতি নিয়োগ করেন, তা মোটেও স্বচ্ছ নয়। কারও কোনও বিরুদ্ধ মতামত শোনা হয় না। মাত্র দু’জন বিচারপতি ঠিক করেন, কারা বিচারপতি হবেন, বৈঠকে ফিরে এসে অন্যদের কাছে হ্যাঁ বা না জানতে চাওয়া হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির সমর্থন পেলেই নিয়োগ চূড়ান্ত হয়, দমিয়ে দেওয়া হয় অন্যদের আপত্তি। এভাবে সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের বিচারপতির মত গুরুত্বপূর্ণ পদ কারও হাতে তুলে দেওয়া যায় কিনা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

চেলমেশ্বরের প্রশ্ন, বিচারপতি নিয়োগে মেধাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত কিনা। যদি কাউকে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আপত্তির যথেষ্ট কারণ থাকে, তাহলে তা অগ্রাহ্য করা কি উচিত। শুধুমাত্র হ্যাঁ বা না মতামতের ভিত্তিতে সংখ্যাগুরু বিচারপতির মতকে গুরুত্ব দিয়ে বিরোধী মত অস্বীকার করা উচিত কিনা তিনি প্রশ্ন করেছেন।

বিচারপতি চেলমেশ্বরই একমাত্র বিচারক যিনি কেন্দ্রের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন সমর্থন করেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে গঠিত ৫ বিচারপতির বেঞ্চে তিনিই একমাত্র আপত্তি তোলেন কলেজিয়াম প্রথার বিরুদ্ধে। যদিও অন্য ৪ বিচারপতি তাঁর আপত্তি খারিজ করে দেন।

চেলমেশ্বর জানিয়েছেন, ২০ বছর ধরে কলেজিয়াম প্রথা চলে আসছে বলেই তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা যাবে না এমন নয়। কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়, তাঁর আপত্তি গোটা প্রথার অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে। কলেজিয়ামে কীভাবে বিচারপতি নিয়োগ হয়, তা নিয়ে বাইরের কারও কোনও ধারণা নেই। কলেজিয়াম সদস্যদেরও আছে কি? তাঁর আরও প্রশ্ন, এর ফলে সত্যিই কি উপকার হচ্ছে দেশের? নাকি আদৌ হচ্ছে না?