নয়াদিল্লি:  দাদার ১০০ বছরের জন্মদিনটা ধূমধাম সহকারে পালন করতে করতে চেয়েছিলেন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। জন্মভিটে রামেশ্বরমে পরিবারের সমস্ত সদস্যদের ডেকে পিতৃপ্রতিম দাদার শততম জন্মদিন পালন করার পরিকল্পনা করেছিলেন কালাম। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ হল না। বাধ সাধল মৃত্যু। গত বছরের ২৭ জুলাই প্রয়াত হন কালাম।

তাঁর থেকে ১৬ বছরের বড় ছিলেন দাদা এপিজে মারাসায়ের। বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় কালামকে পরামর্শ দিয়েছেন মারাসায়ের। কালামের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকও  ছিলেন তাঁর দাদা। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির ছায়াসঙ্গী সৃজন পাল সিংহ এ কথা জানিয়েছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সৃজন তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন একটি বইয়ের মাধ্যমে। বইয়ের নাম ‘হোয়াট ক্যান আই গিভ?: লাইফ লেসনস ফ্রম মাই টিচার,এপিজে আব্দুল কালাম’।

বইটিতে কালামের কালামের জীবনের ব্যক্তিগত ও অজানা কাহিনী এবং বিরল ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। কালামের দর্শন অনুসারে, বই থেকে প্রাপ্ত রয়্যালটি নিখরচায় শিক্ষা ও পিছিয়ে পড়া শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সৃজন। প্রকল্পের নাম-কালাম লাইব্রেরি প্রোজেক্ট।

সৃজন লিখেছেন, ২০১৫-র  মে-তে মারাসায়ের কালামের কাছে এসেছিলেন। এর মাত্র কয়েকমাস পরেই ৯৯ বছর পূর্ণ হবে তাঁর। তাঁর জন্মদিন ৫ নভেম্বর। মারাসায়ের যখন রামেশ্বরম ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে নৈশভোজ করেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। পরে তিনি সৃজনকে বলেছিলেন, ‘শোন, আগামী নভেম্বরে আমার দাদা ৯৯ বছরে পা দেবেন। বল তো, এই বছর শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি কতবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবেন?’

সৃজন জানিয়েছেন, এ কথাটা তিনি যে কোনও মানুষের জন্মদিনের সময়ই জিজ্ঞাসা করতেন। আসলে কালাম মননের দিক থেকে প্রকৃত বিজ্ঞানী ছিলেন। সূর্যের চারপাশে পৃথিবী কতবার ঘুরল, তার সঙ্গে মিলিয়েই বছরের হিসেব করতে ভালোবাসতেন। তাঁর এ ধরনের প্রশ্নের সঙ্গে তিনি পরিচিত ছিলেন।

কালাম বলেছিলেন, আগামী বছর তাঁর দাদা ১০০ বছর পূর্ণ করবেন। শততম জন্মদিনটায় একটা বড়সড় পার্টি দিতে চান তিনি। রামেশ্বরমে পরিবারের সমস্ত সদস্যদের ডেকে এই পার্টির আয়োজন করতে চেয়েছিলেন তিনি। এ জন্য সৃজনকে দায়িত্বও দিয়েছিলেন। তবে দাদাকে কী উপহার দেওয়া হবে, তা নিয়ে সৃজনের সঙ্গে বিস্তর আলোচনা করেন কালাম। শেষপর্যন্ত ঠিক হয়, গ্রামীন ভারতে ১০০ টি গ্রন্থাগার তৈরি করে শততম জন্মদিনের উপহার দেওয়া হবে। জুলাই থেকে এর কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কালাম লাইব্রেরি প্রকল্পের কাজ ২০১৫-র ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই ১০০ টি গ্রন্থাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সৃজন।