নয়াদিল্লি: আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় গতকাল গ্রেফতার হওয়া কার্তি চিদম্বরমকে ৬ মার্চ পর্যন্ত হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি পেল সিবিআই। তাঁর সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ বৃদ্ধির নির্দেশ দিলেন বিশেষ বিচারক সুনীল রানা। কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি আদালতে জানায়, বিদেশে গিয়ে কার্তি কী করেছেন, সে ব্যাপারে 'খুবই চাঞ্চল্যকর তথ্যপ্রমাণ'আছে। বিদেশ সফরে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা পড়ত, সেগুলি তিনি বন্ধ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে তারা।
গতকাল কার্তিকে একদিনের হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। আদালতে ছিলেন কার্তির বাবা-মা, পেশায় আইনজীবী পি চিদম্বরম ও নলিনী চিদম্বরম। দুজনকেই কার্তির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
কার্তির কৌঁসুলি তাঁর জন্য বাড়ির রান্না, ওষুধপত্র নিয়ে আসার অনুমতি চান। ওষুধে ছাড়পত্র দিলেও বাড়ির রান্নায় অনুমতি মেলেনি। তবে কৌঁসুলিকে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এক ঘন্টা করে কার্তির সঙ্গে দেখা করতে সম্মতি দিয়েছে আদালত। সিবিআই জানায়, কার্তির স্বাস্থ্যকর খাবারের বন্দোবস্ত তারাই করবে।

এদিন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সিবিআইয়ের তরফে সওয়াল করেন, এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ব্যাপার নয়, সংবিধানের ২১ ধারা মেনেই তদন্ত চলছে।
তিনি বলেন, কার্তি মেডিকেল চেক আপের সময় কোনও অসুবিধা, অস্বস্তির কথা না জানালেও সফদরজং হাসপাতালের ডাক্তাররা তাঁকে গতকাল রাতে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে পাঠান। আজ সকালে তাঁকে সিবিআই অফিসে নিয়ে আসা হয়। কার্তি হাসপাতালে থাকায়, আজ সকাল সাড়ে ৭টায় একদিনের হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে কার্যত হাতে পায়ইনি সিবিআই।

কার্তির আইনজীবী দলের প্রধান অভিষেক মনু সিংভি জানান, ২০১৭ সালের মে মাসের এফআইআরের ব্যাপারে সিবিআই গত বছরের আগস্টে প্রায় ২২ ঘন্টা কার্তিকে হাতে পেয়েছিল। তারপর আজ পর্যন্ত তাঁকে নতুন কোনও সমন পাঠানো হয়নি। এতে বোঝা যাচ্ছে, ওদের কার্তিকে নতুন করে জেরার কিছু নেই। তিনি বলেন, অসহযোগিতা করা হচ্ছে, এটা বোঝানোর একমাত্র রাস্তা সমন জারি করা। কিন্তু আমি অসহযোগিতা করছি কিনা, এটা কোনওদিন যাচাই করে দেখা হল না। আচমকা ৬ মাস বাদে গ্রেফতারি, বিমান থেকে মাটিতে পা দিতেই। এটা অবিশ্বাস্য।
সিংভির দাবি, কার্তির বিরুদ্ধে এক কণাও প্রমাণ নেই। আদালতের নির্দেশ বারংবার মানা সত্ত্বেও ওঁকে গ্রেফতার করা হল। বিদেশে থাকাকালে কার্তি যদি কোনও অন্যায় করেই থাকেন, তাহলে কেন সিবিআই যে আদালত তাঁকে বিদেশ সফরের অনুমতি দিয়েছিল, সেখানে অবমাননার পিটিশন পেশ করেনি?
সিবিআই জানিয়েছে, ২০০৭ এর মে মাসে আইএনএক্সকে প্রথম ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন বোর্ড (এফআইপিবি) ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ২০০৮ এর এপ্রিলে তা অর্থমন্ত্রককে জানানো হয়। ২০০৮ এর জুন থেকে ঘুষের অর্থ দেওয়া শুরু হয়। দ্বিতীয় এফআইপিবি ছাড়পত্রটি দেওয়া হয় ২০০৮ এর ২ নভেম্বর। এপ্রিলের রেফারেন্সটি কি চাপ দেওয়ার কৌশল ছিল, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের কাছে প্রমাণস্বরূপ ই মেল, ইনভয়েস আছে যা থেকে বলা যায়, কার্তির সঙ্গে যোগ থাকা অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিক কনসালটেন্সি প্রাইভেট লিমিটেডকে টাকা দেওয়া হয়েছিল, যে সময়ে আইএনএক্স মিডিয়া দাক্ষিণ্য পেয়েছিল, তখন। এগুলি নিয়ে কার্তিকে জেরা করা দরকার। তিনটি মোবাইল ফোন তাঁর কাছে পাওয়া গিয়েছে। সেগুলিও পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ন্যূনতম ১৪ দিন তাঁকে হেফাজতে রাখা দরকার।

প্রসঙ্গত, চিদম্বরম ২০০৭ সালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালে বিদেশে প্রায় ৩০৫ কোটি টাকা পাওয়ার জন্য আইএনএক্স মিডিয়াকে সম্মতি দেয় এফআইপিবি। এতে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এই সংক্রান্ত গত বছর ১৫ মে এফআইআর দায়ের হয়। সে ব্যাপারেই গতকাল ব্রিটেন থেকে ফিরে চেন্নাই বিমানবন্দরে নামতেই গ্রেফতার হন কার্তি।