ম্যাঙ্গালুরু: ভিনধর্মের একটি ছেলের প্রেমে পড়েছে মেয়ে। সে কথা জানতে পেরেই তাকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একটি অনাথ আশ্রমে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছিলেন মা। সেখান থেকে তাঁকে অন্য এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। দীর্ঘদিন পরে ওই তরুণী কোনওক্রমে আত্মীয়দের কাছে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে দুর্দশার কথা জানান। এরপরেই আত্মীয়রা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেছে। এই ঘটনা ঘটেছে কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে। অভিযুক্ত মহিলার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। তবে তিনি অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।


পুলিশ সূত্রে খবর, ২৪ বছরের ওই তরুণীর নাম অঞ্জলি প্রকাশ। তাঁর বাড়ি ত্রিশুর জেলায়। তিনি আত্মীয়দের পাঠানো ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এটা আমার শেষ ভিডিও হতে পারে। আমার জীবন বিপন্ন। আমার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে দায়ী থাকবেন মা। গত দু’বছর ধরে ভিনধর্মের একটি ছেলেকে ভালবাসার কারণে আমার উপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। আমাকে দু’মাস আরএসএস-এর একটি অনাথ আশ্রমে আটকে রাখা হয়েছিল। এখন আমি ম্যাঙ্গালুরুতে একটি ভাড়াবাড়িতে আছি। বিজেপি-র লোকজন আমার উপর নজর রাখছে।’

অঞ্জলিকে পুলিশ উদ্ধার করার পাঁচদিন পরে গতকাল একটি মালয়লম সংবাদমাধ্যম তাঁর পাঠানো ভিডিও বার্তা সম্প্রচার করেছে। সেই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘এক বছর ধরে আমাকে ম্যাঙ্গালুরুর ওই ভাড়াবাড়িতে আটকে রেখেছেন মা। তিনি বাড়ির সবাইকে বলেছেন, আমি চাকরি করছি। এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে ম্যাঙ্গালুরুতে নিয়ে এসে আটকে রাখার আগে আমাকে কোচির একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে মানসিক রোগের পরীক্ষা করানো হয়।’

অঞ্জলির প্রেমিক মানস এন এম বলেছেন, ‘অঞ্জলির মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ফলে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। আমি কেরল হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাসের আবেদন জানাই। তখন অঞ্জলির মা কোচির ওই হাসপাতাল থেকে আনা রিপোর্টে দাবি করেন, তাঁর মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ। দীর্ঘদিন পরে একটি মোবাইল ফোন জোগাড় করতে পেরে অঞ্জলি আমাকে ফোন করে গোটা ঘটনা জানায়।’

ম্যাঙ্গালুরুর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) উমা বলেছেন, ‘১ মে আমরা খবর পাই, অঞ্জলি বিপদে পড়েছেন। এরপরেই যে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল সেখানে গিয়ে আমরা তাঁকে উদ্ধার করি। তাঁর মা তখন সেখানেই ছিলেন। অঞ্জলি জানান, তাঁকে মারধর করা হত। বেআইনিভাবে অঞ্জলিকে আটকে রাখার অভিযোগে তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অঞ্জলিকে আদালতে পেশ করা হয়েছিল। তিনি মায়ের সঙ্গে বাড়িতে যেতে অস্বীকার করেন। এরপর তাঁকে একটি হোমে পাঠানো হয়েছে।’