তিরুবনন্তপুরম:  ১৮ বছর আগে নারকেল গাছ থেকে পড়ে গিয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন কেরলের শশী জি। গাছে উঠে নারকেল পাড়াই ছিল তাঁর পেশা। বেশ কিছুদিন শয্যাশায়ী থাকার পর উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হলেও তাঁর ডান পা ও হাত অসাড় হয়ে পড়ে। জীবিকার জন্য গ্রামের পঞ্চায়েতের কাছে একটা তিন চাকার গাড়ি চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পঞ্চায়েত শশী জি-কে বলে, তাঁর বাড়ির সামনে তো রাস্তা নেই। আছে তো এক টুকরো আলপথ মাত্র। ওই রাস্তায় তিন চাকার গাড়ি চলবে কীভাবে? আগে তো রাস্তা তৈরি হোক।
পঞ্চায়েত রাস্তা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পালনে পঞ্চায়েতের হেলদোল দেখতে না পেয়ে নিজেই কাজে লেগে পড়লেন।
৫৯ বছরের শশী জি গত তিন বছর ক্রমাগত কোদাল দিয়ে মাটি কেটে চলেছেন। লক্ষ্য একটাই বাড়ির বাইরে একটা রাস্তা তৈরি । অবশেষে অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি।
আসলে তাঁর বাড়ি একটা মালভূমির ওপর। সেখানে পৌঁছতে গেলে সরু রাস্তা বেয়ে হেঁটে ওপরে উঠতে হত গ্রামবাসীদের। সেই রাস্তা চওড়া করার গুরুভার কাঁধে নেন শশী জি। প্রতিদিন ছয় ঘন্টা ধরে মাটি কোপানোই এতদিন ধরে তাঁর একমাত্র কাজ। তাঁর প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে যাবতীয় প্রতিকূলতা। তিন বছরের চেষ্টায় তৈরি করে ফেলেছেন ২০০ মিটার লম্বা কাঁচা রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে এখন অনায়াসে শুধু তিন চাকার গাড়ি কেন, ছোট গাড়িও চলতে পারবে।
শশী জি বলেছেন, লোকে বলত, আমি পারব না। তাই মাটি কাটায় এতদিন কোনও খামতি দিইনি। আমি ভাবছিলাম, মাটি কাটতে থাকলে একটা রাস্তা হবে। আর সেটা ফিজিওথেরাপিরও কাজ করবে।পঞ্চায়েত আমাকে একটা গাড়ি যদি নাও দেয়, তাহলেও লোকজন তো ভবিষ্যতে একটা রাস্তা পাবে।

শশী যে অবিশ্বাস্য মনোবলের পরিচয় দিয়ে আস্ত একটা রাস্তা তৈরি করেছেন, তা নিয়ে আপ্লুত তাঁর প্রতিবেশীরা। গত তিন বছরের কথা বলতে গিয়ে শশী জির চোখে জল। কেঁদে ফেলেন তাঁর স্ত্রী। ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তায় আকূল। বললেন, ওর আবার কিছু হলে চিকিত্সার জন্য টাকাপয়সা পাব কোথায়? এমনিতেই অনেক টাকা ধার হয়ে গিয়েছে। এখন সবাই রাস্তার কথা বলছে, কিন্তু আমাদের কী হবে?

শশী জি নিজেকে সামলে একটু হেসে বললেন, রাস্তার কাজটা শেষ করতে এখনও এক মাস লাগবে। পঞ্চায়েত কিন্তু এখনও আমাকে তিন চাকার গাড়ি দেয়নি।