নয়াদিল্লি: দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ার সুযোগ পাওয়া সহজ নয়। বিশেষ করে গরিব পরিবারের সন্তানদের পক্ষে তো আরও কঠিন। কিন্তু এই কাজটাই করে দেখিয়েছেন কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী। তাঁরা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে সুযোগ করে নিয়েছেন। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই তাঁদের লক্ষ্য।


১৭ বছর বয়সি প্রিন্স থাকেন মায়াপুরী অঞ্চলে। এখানেই ভারতের অন্যতম বড় বাতিল জিনিসপত্রের বাজার। সারাদিন সেইসব জিনিসপত্রের গন্ধ সহ্য করতে হয়। তাছাড়া দিন-রাত ট্রেনের শব্দও রয়েছে। এরই মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রিন্স। তিনি রাতে পড়াশোনা করেন। কারণ, সেই সময় কোলাহল কম থাকে। বাইরের শব্দ যাতে পড়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে, তার জন্য কানে তুলো গুঁজে রাখেন এই পড়ুয়া। তিনি দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে কিরোরী মল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। আইএএস অফিসার হওয়াই তাঁর লক্ষ্য।

১৭ বছর বয়সি দেবীন্দর থাকেন উত্তর-পশ্চিম দিল্লির তিগরি বস্তিতে। বাবা পিওন এবং মা লেবু ও লঙ্কা বিক্রি করেন। দু জনে মিলে মাসে হাজার দশেক টাকা আয় করেন। কোনও কোনও মাসে এর চেয়ে কম আয়ও হয়। বর্ষাকালে বস্তি জলে ভরে যায়। নানারকম রোগ হয়। এরই মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন দেবীন্দর। পরিবারে তিনিই প্রথম কলেজে ভর্তি হয়েছেন। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯০.৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে শহিদ ভগত সিংহ কলেজে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করছেন এই পড়ুয়া। কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া তাঁর কাছে বড় বিষয়।

ইন্দিরা ক্যাম্প বস্তির মধু হংসরাজ কলেজে হিন্দি নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি যেখানে থাকেন, সেই অঞ্চলের পরিবেশ পড়াশোনা করার উপযুক্ত নয়। বাবা একটি জুতোর কারখানায় কাজ করেন। আয় সামান্য। তারই মধ্যে পড়াশোনা করে ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন এই ছাত্রী। সাংবাদিক হয়ে মহিলাদের ক্ষমতায়নের পক্ষে সওয়াল করাই মধুর লক্ষ্য। সাংবাদিক হতে না পারলে শিক্ষিকা হতে চান তিনি।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিল্লির গরিব পরিবারগুলির সন্তানদের পড়াশোনায় সাহায্য করছে। এ বছর ১৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হতে সাহায্য করেছে এই সংস্থা। তার ফলেই প্রিন্স, মধুরা স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে চলেছেন।