নয়াদিল্লি: লোকসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গেল তাৎক্ষনিক তিন তালাক ঘোষণাকে জামিন অযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য করার উদ্দেশ্যে পেশ হওয়া বিলটি। এবার সেটি যাবে রাজ্যসভায়। তবে কংগ্রেস আজ বিলটি সমর্থন করছে বলে জানানোর পর উচ্চকক্ষে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও তা পাশ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখান থেকে বিলটি পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনি সই করলেই সেটি আইন হবে। মুসলিম মহিলা (বিবাহ সংক্রান্ত অধিকার রক্ষা)বিলটি শুধুমাত্র তালাক-ই-বিদ্দত বা তাৎক্ষনিক তিন তালাকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। বিলে নির্যাতিতা মহিলাকে নিজের ও নাবালক সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত ভাতা চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাবি পেশ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নাবালক সন্তানদের হেফাজত চেয়েও আবেদন করতে পারবেন।
এই আইনে মৌখিক, লিখিত বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে যেমন এসএমএস, ইমেল ও হোয়াটসঅ্যাপ, যে কোনও ভাবে তিন তালাক ঘোষণা বেআইনি, অচল বলে গণ্য হবে।
বিরোধী সদস্যরা একগুচ্ছ সংশোধনী পেশ করেছিলেন। তবে সেগুলি খারিজ হয়ে যায়। সরকার পক্ষ বলছে, বিলটি পাশ হওয়া এক ঐতিহাসিক ব্যাপার।
বিলে তিন তালাক ঘোষণায় দোষী স্বামীর তিন বছরের কারাবাসের সংস্থান রয়েছে।
আরজেডি, এআইএমআইএম, বিজেডি, এআাইএডিএমকে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ বিলের বিরোধিতা করে বলে, এটি একপেশে, ভুলে ভরা।


এদিন বিলটি পেশ করে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, একাধিক মুসলিম রাষ্ট্র এর মধ্যেই তিন তালাক নিয়ন্ত্রণে ব্য়বস্থা নিয়েছে । ভারতেরও সেদিকে পা বাড়ানো উচিত। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, টিউনিসিয়া সহ একাধিক ইসলামি রাষ্ট্রে তিন তালাককে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তাহলে ইসলামিক দেশগুলি কোথায় চলে গিয়েছি আর আমরা কোথায় পড়ে আছি, দেখুন।
এদিন বিলটি পেশ করে যাতে সেটি পাশ হয়ে যায়, সেজন্য সদস্যদের আবেদন করে তিনি এর সঙ্গে ধর্ম বা রাজনীতির যোগ না টানার কথা বলেন। প্রসাদ বলেন, এই সভা ও সর্বোচ্চ পঞ্চায়েতের কাছে আবেদন, বিলটিকে রাজনীতির জায়গা থেকে বিচার করবেন না। একে রাজনীতির চার দেওয়ালের মধ্যে বা ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির কৌশল বলে দেখা ঠিক হবে না। মুসলিম মহিলারা তাৎক্ষনিক তিন তালাকের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ২২ আগস্ট এই প্রথাকে অসাংবিধানিক, একপেশে বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিভিন্ন সময় বিচারবিভাগের নানা রায়ে এ ব্যাপারে উদ্বেগ ফুটে উঠেছে বলে জানান প্রসাদ। বলেন, মনে হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তিন তালাকের ঘটনা কমবে, পরিস্থিতি ভাল হবে। কিন্তু ২০১৭ সালেই প্রায় ৩০০টি তিন তালাকের ঘটনা ঘটেছে, রায় বেরনোর পর ১০০টি তিন তালাকের ঘটনার খবর এসেছে। তিন তালাক মুসলিম মহিলাদের কষ্ট বাড়িয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কি এরপরও চোখ বুজে চুপ করে থাকব! আমরা শরিয়ায় নাক গলাতে চাই না। এই বিল শুধু তালাক-ই-বিদ্দত নিয়ে। এটা ধর্ম, বিশ্বাস, পুজোর বিষয় নয়, লিঙ্গ সাম্য, সমানাধিকার ও মর্যাদার বিষয়।
বিলটি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানোর দাবি করেন কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে। বলেন, আমরা বিলের পক্ষেই, তবে এতে বেশ কিছু গলদ, সমস্যা আছে। বিলটি নিয়ে কোনও আলোচনাও হয়নি। সুতরাং একসঙ্গে বসে কথাবার্তার মাধ্যমেই ভুল, ত্রুটিগুলি দূর করা সম্ভব। স্ট্যান্ডিং কমিটিই সেই মঞ্চ। দেশ ও মুসলিম মহিলাদের স্বার্থে বিস্তারিত আলোচনা হোক। সেজন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া যায়। মহিলাদের ক্ষমতায়নে এত তাড়াহুড়ো কেন? প্রসাদ জবাবে বলেন, দেশের স্বার্থেই এই বিল।