নয়াদিল্লি: নোট বাতিল নিয়ে দিনভর হই-হট্টগোলের মধ্যেই লোকসভায় বিনা আলোচনাতেই পাশ হল নতুন আয়কর সংশোধনী বিল। বিরোধীদের তুমুল স্লোগানের মধ্যেই মঙ্গলবার লোকসভায় ট্যাক্সেশন ল’জ (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল, ২০১৬ পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
বিলে বলা হয়েছে, ৮ নভেম্বরের পর অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া হিসেব বহির্ভুত টাকার কথা অ্যাকাউন্টের মালিক নিজে আয়কর বিভাগকে জানালে কালো টাকার ওপর জরিমানা ও কর মিলিয়ে দিতে হবে ৫০ শতাংশ। যার মধ্যে কর ৩০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ করের ওপর ৩৩ শতাংশ সারচার্জ আর্থাত্ আরও প্রায় ১০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ জরিমানা।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও ব্যক্তি ১ কোটি টাকা কালো টাকা থাকার কথা ঘোষণা করেন, তাহলে, ৫০ লক্ষ টাকা যাবে সরকারের কোষাগারে। বাকি ৫০ লক্ষ পাবেন ওই ব্যক্তি। যদিও, ওই টাকা তিনি সঙ্গে সঙ্গে হাতে পাবেন না। হাতে পাবেন অর্ধেক (২৫ লক্ষ) টাকা, বাকি অর্ধেক টাকা বিনা সুদে চার বছর রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায়।
অন্যদিকে, যাঁরা স্বেচ্ছায় ঘোষণা করবেন না এবং পরবর্তীকালে, হিসেব-বহির্ভূত টাকার কথা আয়কর দফতর জানতে পারলে কালো টাকার ওপর কর ও জরিমানা মিলিয়ে দিতে হবে ৮৫ শতাংশ। তার মধ্যে ৬০ শতাংশ কর, করের ২৫ শতাংশ সারচার্জ আর্থাৎ ১৫ শতাংশ এবং জরিমানা হতে পারে ১০ শতাংশ।
অর্থাত্, ১ কোটি কোলা টাকার কর হিসেবে দিতে হবে ৮৫ লক্ষ টাকা। ১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা হাতে পাবেন মালিক, বাকি সাড়ে ৭ লক্ষ বিনা সুদে চার বছর রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায়।
লোকসভায় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ। মঙ্গলবার, সেখানে আলোচনা ছাড়া এক মিনিটের মধ্যে আয়কর আইন সংশোধনী বিল ধ্বনি ভোটে পাস করিয়ে নেয়। বিরোধীদের দাবি, মোদী সরকার আইন সংশোধন করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দিচ্ছে। বিরোধীদের এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। জেটলি জানান, এই টাকায় আসলে গরিবদের কল্যাণে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্প চালু করতে সুবিধা হবে।
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, কেন্দ্র হই-হট্টগোলের মধ্যে অত্যন্ত গোপনে এই বিলটি পেশ করায় বিরোধীরা প্রতিবাদ করার সুযোগ পায়নি। যা তাদের পাওয়া উচিত ছিল। এই প্রেক্ষিতে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন জানান, যেহেতু বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই তা অবিলম্বে পাশ হওয়া প্রয়োজন।
বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও দাবি করেন, আইন সংশোধন করা হচ্ছে গরিবের স্বার্থে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার জানান, সংশোধনী কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য নয়। বরং, গরিবদের থেকে লুঠ হওয়া টাকা তাঁদের কল্যাণে ব্যবহার করা।
নিয়মানুযায়ী, ১৪ দিনের মধ্যে বিলটি রাজ্যসভায় পাস করাতে হবে। তবে এটি যেহেতু আর্থিক বিষয়ক বিল, তাই তা না হলেও বিলটি আইনে পরিণত হবে।