নয়াদিল্লি ও ভোপাল: মধ্যপ্রদেশের চলতি রাজনৈতিক টানাপোড়েনে নয়া মোড়। বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগের মধ্যেই কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং ছয় মন্ত্রী সহ ও ১৩ বিধায়ক আচমকাই ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হয়েছেন বলে খবর। ওই ১৯ জন জ্যোতিরাদিত্যর অনুগামী বলে খবর। রাজ্যসভার আসনের নির্বাচনের আগে এই ঘটনা অত্যন্ত তাত্পর্য্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রদেশের শাসক দল ইতিমধ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে কমলনাথ সরকারকে ফেলার জন্য তাদের বিধায়কদের ভাঙানোর চেষ্টার অভিযোগ করেছে। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা একেবারে মাথায় মাথায়। রাজ্য মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ ঘটানো হবে বলে খবর। এরইমধ্যে দলের বিধায়কদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা অস্বস্তি বাড়িয়েছে কংগ্রেসের। যদিও কংগ্রেস এই ঘটনাকে প্রকাশ্যে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছে না। কিন্তু সূত্রের খবর, দিল্লি থেকে সফর কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি ভোপালে ফিরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সংবাদসংস্থার খবর, সিন্ধিয়াকে ফোন করে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে গুনার রাজ পরিবারের সন্তানের অনুগামী রাজ্য মন্ত্রিসভার ছয় সদস্যের ফোনও সুইচড অফ দেখিয়েছে।
যে মন্ত্রীদের ফোন সুইচড অফ দেখিয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তুলসি সিলাভাট, শ্রমমন্ত্রী মহেন্দ্র সিংহ সিসোদিয়া, পরিবহণমন্ত্রী গোবিন্দ সিংহ রাজপুত, নারী ও শিশু উন্নয়নমন্ত্রী ইমারতি দেবী, খাদ্যমন্ত্রী প্রদ্যুম্ন সিংহ তোমর এবং স্কুল শিক্ষামন্ত্রী প্রভুরা চৌধুরী।
এ ঘটনা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে কংগ্রেসের এক মুখপাত্র বলেছেন, এতে গুরুতর কিছু নেই।
এর আগে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে মধ্যপ্রদেশ থেকে আসন্ন নির্বাচনে রাজ্যসভায় পাঠানোর দাবি জানানো হয়। এরইমধ্যে রাজ্য সভাপতি পদ ঘিরে কমলনাথ ও জ্যোতিরাদিত্যর মধ্যে দীর্ঘদিনই সংঘাত চলছে।
রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও আগামী ২৬ মার্চের রাজ্যসভার নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রবিবার রাতে দিল্লিতে আসেন কমলনাথ।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা দিগ্বিজয় সিংহ, প্রভাত ঝা ও সত্যনারায়ণ জাটিয়ার রাজ্যসভার সদস্যপদের মেয়াদ আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হচ্ছে।
২৩০ সদস্য বিশিষ্ট মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার সমীকরণ অনুযায়ী, কংগ্রেস ও বিজেপি-উভয় দলেরই একটি করে আসনে জয় নিশ্চিত। লড়াই তৃতীয় আসন নিয়ে। কংগ্রেসের বিধায়র সংখ্যা ১১৪, বিজেপির ১০৭। চার নির্দল, বিএসপি-র দুই এবং সমাজবাদী পার্টির এক বিধায়ক কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন করছেন।
কংগ্রেসের ১০ বিধায়ক নিখোঁজ হয়ে যাওযার পর মধ্যপ্রদেশে গত সপ্তাহে নাটকীয় রাজনৈতিক টানাপোড়েন দেখা দিয়েছিল। এদিনের ঘটনায় কংগ্রেস সরকারের সংকট বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এরইমধ্যে সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধেতেই কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্যর বৈঠক হয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের। এই বৈঠকে জ্যোতিরাদিত্যকে রাজ্যসভায় পাঠানোর ব্যাপারে সহমতি হয়েছে বলেও খবর। যদিও সূত্রের খবর, জ্যোতিরাদিত্য কেন্দ্রে ক্যাবিনেট মন্ত্রীপদও চেয়েছেন। এই থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী জ্যোতিরাদিত্যর কংগ্রেস সম্পর্কে মোহভঙ্গ হয়েছে? যদিও এই জল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষই কোনও মন্তব্য করেনি।
একদিকে, কংগ্রেস যখন বিজেপির বিরুদ্ধে মধ্যপ্রদেশে তাদের সরকার ফেলার জন্য বিধায়ক ভাঙানোর অভিযোগ তুলছে, সেই সময় বিজেপি নেতাদের সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্যর বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের খবর, মধ্যপ্রদেশে যা কিছু হচ্ছে, তার পিছনে রয়েছে রাজ্যসভার নির্বাচন। কংগ্রেস ও বিজেপি-উভয় দলের কাছেই তা মর্যাদার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরইমধ্যে সূত্রের খবর, জ্যোতিরাদিত্যর অনুগামী বিধায়ক ও মন্ত্রীরা ব্যাঙ্গালোরে পৌঁছে গিয়েছেন। জানা গেছে, ছয় মন্ত্রী সহ ১৭ বিধায়ক সেখানে গিয়েছেন। আগামী ১৬ মার্চ মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার অধিবেশনের প্রথমদিনই অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে বিজেপি।