ভোপাল: করোনাভাইরাস আতঙ্ককে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মধ্যপ্রদেশে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আস্থা ভোট এড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ। বিধানসভায় তুলকালাম বাঁধালেন বিরোধীরা। দ্রুত শক্তি পরীক্ষার দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ বিজেপি। কাল হবে শুনানি। আজ বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল কংগ্রেস সরকারের। আস্থাভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল লালজি টন্ডন। রাজ্যপালকে আস্থাভোট পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে।এদিন রাজ্যপালের ভাষণের পর আস্থা ভোট না করে অধ্যক্ষ এনপি প্রজাপতি বিধানসভার অধিবেশন ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুলতুবি করে দেন।
এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান ও নয় বিধায়ক। তাঁরা ১২ ঘন্টার মধ্যে বিধানসভায় কমলনাথ সরকারের শক্তি পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন। আগামীকাল তাঁদের আর্জির শুনানি হবে।
সর্বশেষ খবর, আগামীকাল মঙ্গলবারই কমলনাথকে বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে বলেছেন রাজ্যপাল লালজি ট্যান্ডন। দুদিন আগে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার পর সোমবারই তিনি শক্তির প্রমাণ দিন। কিন্তু সেই নির্দেশ বিফলে যায় ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিধানসভা স্থগিত হওয়ায়। রাজ্য সরকার জানায়, একাধিক রাজ্যে বিধানসভা অধিবেশন করোনাভাইরাস সঙ্কটের জেরে স্থগিত হয়ে গিয়েছে। কমলনাথকে তিনি চিঠি দিয়েছেন, ১৭ মার্চের মধ্যে শক্তিপরীক্ষা না করালে ধরে নিতে হবে, আপনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। বিধানসভার স্পিকারকে আজই আস্থাভোট করাতে বলায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সমালোচনা করে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাকেও অর্থহীন, ভিত্তিহীন ও সাংবিধানিক মূল্যবোধের বিরোধী বলেছেন রাজ্যপাল।


করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার উল্লেখ করে অধ্যক্ষ এদিন অধিবেশন মুলতুবি করে দেন। বিজেপি রাজ্যপালের মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠির উল্লেখ করলে অধ্যক্ষ বলেন, এটা রাজ্যপাল ও সরকারের মধ্যে বার্তা বিনিময়।
এদিন সকালে রাজ্যপাল মধ্যপ্রদেশের মর্যাদা যাতে বজায় থাকে সেজন্য সভার প্রত্যেককে আইন মেনে চলার পরামর্শ দেন। এদিন বিধানসভায় তাঁকে স্বাগত জানান কমলনাথ। মুখ্যমন্ত্রী মাস্ক পরেছিলেন। অধ্যক্ষ ও কংগ্রেস বিধায়করাও মাস্ক পরেছিলেন। তবে বিজেপি বিধায়করা মাস্ক পরেননি।

উল্লেখ্য, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের পর কমলনাথের কংগ্রেস সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ খুবই কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে। সিন্ধিয়ার সঙ্গে কগ্রেসের ২২ বিধায়কও ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর মধ্যে ছয়জনের ইস্তফা মঞ্জুর হয়েছে।
এরমধ্যে শিবরাজ রাজভবনে যান। রাজ্যপালের কাছে নিয়ে যান দলের ১০৬ বিধায়ককে। সেইসঙ্গে বিধায়কদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠিও রাজ্যপালের হাতে তুলে দেওয়া হয়। চিঠিতে বিধায়করা স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করেছেন, তা জানতে চান রাজ্যপাল। রাজ্যপাল বলেছেন, তিনি বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। সেগুলি মেনে চলা উচিত। শিবরাজ বলেছেন, সরকার সংখ্যালঘু হওয়ায় তাঁরা তাঁদের বিধায়কদের রাজ্যপালের কাছে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। তাদের ক্ষমতায় থাকার আর অধিকার নেই।
সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বলে বিজেপি যে দাবি করেছে, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ বলেছেন, এমন হলে বিজেপি অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসুক। তিনি বলেছেন, গত এক বছরে তিনবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিয়েছি। ওদের যদি মনে হয় যে, সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তাহলে অনাস্থা প্রস্তাব আনুক। এর থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে কেন।