নয়াদিল্লি ও কলকাতা: একদিকে রাজ্যে যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে কংগ্রেস। তখন দিল্লিতে সেই তৃণমূলের নেত্রীর সঙ্গেই বৈঠকে বসতে চলেছেন কংগ্রেসের সভানেত্রী।
নরেন্দ্র মোদীর রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রার্থী দাঁড় করাতে চাইছে বিরোধীরা। এ নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে কোমর বেঁধে নেমেছেন সনিয়া গাঁধী। সেই লক্ষ্যেই শরদ যাদব, নীতীশ কুমার, শরদ পওয়ার, সীতারাম ইয়েচুরিদের পর এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসতে চলেছেন।
মঙ্গলবার ১০ নম্বর জনপথে সনিয়া-মমতা বৈঠক। কিন্তু, রবিবারই তো এ রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই হয়েছে তৃণমূলের! তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুঠ, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, কংগ্রেসকে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে প্রদেশ কংগ্রেস! আর সেই দলেরই নেত্রীর সঙ্গে কি না বৈঠকে বসছেন সনিয়া গাঁধী! এভাবে কি লড়াই সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন বহু কংগ্রেস নেতা-কর্মীই।
>
তাই পুরভোটের আগেই সনিয়াকে চিঠি দিয়ে অধীর বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে রণকৌশল ঠিক করতে আপনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। আরএসএস-বিজেপি মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে জাতীয় স্তরে একসূত্রে বাঁধা প্রয়োজন। কিন্তু, একই সঙ্গে, গণতন্ত্র এবং স্বচ্ছতার প্রতিও দায়বদ্ধ থাকা জরুরি। আপনার (সনিয়া গাঁধীর) নেতৃত্বে রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীরা, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরেপক্ষতার স্বার্থে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন।

এদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, উনি যদি উন্নয়ন করে থাকেন ভোট করে দেখান। এটা আমার চ্যালেঞ্জ, চ্যালেঞ্জ। ডোমকল, রায়গঞ্জ জিতে দেখান। আমি সাংসদ পদ ছেড়ে দেব। প্রসঙ্গত, রায়গঞ্জ পুরসভা কংগ্রেসের দখলে ছিল। তা ছিনিয়ে নিতে চাইছে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদ অধীর চৌধুরীর শক্ত গড়, তা দখল করতে চাইছে তৃণমূল। পূজালি পুরসভাও একদা কংগ্রেসের দখলে ছিল, দল ভাঙিয়ে তার দখল নিয়েছিল তৃণমূল। এবার সরাসরি জিততে চাইছে তারা।

রাজ্যে যখন তৃণমূল-কংগ্রেসের এরকম সাপে নেউলে সম্পর্ক, তখন দিল্লিতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসতে চলেছেন সনিয়া গাঁধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দিল্লিতে দোস্তি, রাজ্যে কুস্তি কি সম্ভব? কটাক্ষের সুরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে বিজেপি। সনিয়া-মমতা বৈঠককে গুরুত্ব দিতে নারাজ তারা। দলের (পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, এনডিএ প্রার্থী বিশাল ব্যবধানে জিতবেন। এনডিএ-র বাইরের অনেক দলও আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন করবে। কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো কিছু দল বিরোধিতার নামে বিরোধিতা করছে।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, জাতীয় রাজনীতির বাধ্যবাধ্যকতায় মমতা ছাড়া মোদী বিরোধিতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় সনিয়ার। উল্টোদিকে, এ রাজ্যে তৃণমূলের কাছে আত্মসমর্পণ করলে, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুরের মতো যে ক’টা জায়গায় এখনও কংগ্রেস আছে, তাও হাতছাড়া হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা। এই পরিস্থিতিতে রাহুল-অধীররা। কোন সমীকরণে দিল্লি আর রাজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখেন, নেতা-কর্মীদের কীভাবে বোঝান, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।