নয়াদিল্লি: বছরভর প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাওয়ের জন্মশতবার্ষিকী কর্মসূচির সূচনা করে তাঁকে মহান ভূমিপুত্র বলে উল্লেখ করলেন ডঃ মনমোহন সিংহ। প্রথম ও দ্বিতীয় কংগ্রেস-ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নয়ের দশকে নরসিমা রাও মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর পদ সামলেছেন। বলা হয়, আমূল সংস্কারের রাস্তায় পা রেখে ১৯৯১ সালে মনমোহনের পেশ করা বাজেটই দেশের অর্থনীতির খোলনলচে বদলে দিয়েছিল। কিন্তু মনমোহন বলছেন, রাওকেই প্রকৃত অর্থে ভারতে আর্থিক সংস্কারের পিতা, রূপকার বলা যায়, সেই দৃষ্টিভঙ্গি ও তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস ছিল তাঁর।

রাওয়ের জন্মশতবর্ষ পালনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কংগ্রেসের তেলঙ্গানা শাখা। তার আনুষ্ঠানিক সূচনা পর্বে মনমোহন বলেছেন, তিনি বিশেষ ভাবে এজন্য খুশি যে, ১৯৯১ সালে রাও সরকারের প্রথম বাজেট পেশের সঙ্গে তাঁকে বছরভর স্মরণ করার কর্মসূচি মিলে যাচ্ছে।

১৯৯১ এর বাজেটকে আধুনিক ভারতের ভিত্তি, দেশে আর্থিক সংস্কার ঘটানোর রোডম্যাপ বলেন অনেকে। এপ্রসঙ্গে মনমোহন বলেন, রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসাবে তিনি প্রথম বাজেট পেশ করেছিলেন রাজীব গাঁধীর স্মৃতিতে। সেই বাজেট আর্থিক সংস্কার ও উদারীকরণের পথে ভারতকে নানা দিকে বদলে দিয়েছিল। মনমোহন বলেছেন, সিদ্ধান্তটা নেওয়া বেশ কঠিন ছিল, সাহস লেগেছিল, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী রাও আমাকে সংস্কার ঘটানোর পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ছিলেন, ভারতীয় অর্থনীতির সেই সময়ের রোগটা তিনি ধরতে পেরেছিলেন। এই দিনে তাঁর জন্মশতবর্ষ কর্মসূচির সূচনা করে সেই মানুষটিকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই যাঁর সংস্কারগুলি বাস্তবায়নের সাহস, ইচ্ছে ছিল। প্রয়াত রাজীব গাঁধীর মতোই রাওয়েরও দেশের গরিবদের প্রতি গভীর ভালবাসা ছিল।

নানা দিক থেকে রাও তাঁর ‘বন্ধু’, ‘দার্শনিক’ ও ‘পথপ্রদর্শক ‘ ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন মনমোহন। বলেন, বিদেশি বিনিময় মুদ্রার ভান্ডার মাত্র ২ সপ্তাহের আমদানির সমান হয়ে পড়েছিল, ভারত বিরাট সঙ্কটের সামনে পড়েছিল, তাই ১৯৯১ এ দ্রুত সত্যিকারের কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু রাজনীতির দিক থেকে বড় প্রশ্ন ছিল, চ্যালেঞ্জ সামলাতে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া যাবে কিনা। গভীর সঙ্কটে পড়া একটা সংখ্যালঘু সরকার, যাকে টিকে থাকতে বাইরের সমর্থনে ভরসা করতে হয়েছিল। কিন্তু নরসিমা রাওজি সবাইকে বুঝিয়ে সঙ্গে নিয়ে চলতে পেরেছিলেন। ওনার আস্থা পেয়েই ওনার স্বপ্ন পূরণের কাজে এগিয়ে যেতে পেরেছিলাম।

ফরাসি দার্শনিক ও ঔপন্য়াসিক ভিক্টর হুগোকে উদ্ধৃত করে মনমোহন বলেন, উনি একবার বলেছিলেন, যে ভাবধারার সময় এসে গিয়েছে, দুনিয়ার কোনও শক্তিরই তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। ভারতের বড় আর্থিক শক্তি হিসাবে উত্থান এমনই এক ব্যাপার। সামনের পথটা ছিল কঠিন, প্রতিকূল। কিন্তু সময় এসে গিয়েছিল গোটা বিশ্বকে সোচ্চারে জানানো যে, ভারত জেগে উঠেছে। তারপর বাকিটা ইতিহাস। আজ পিছন ফিরে তাকালে প্রকৃত অর্থেই নরসিমা রাওকে ভারতে আর্থিক সংস্কারের রূপকার বলা যায়।