নয়াদিল্লি: নির্ভয়াকাণ্ডে সর্বোচ্চ আদালতে বহাল দোষীদের নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির সাজা। কিন্তু গণধর্ষণের ঘটনায় সব থেকে নৃশংস ভূমিকা ছিল যার, বন্দিদশা কাটিয়ে বহাল তবিয়তে সেদিনের সেই নাবালক।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। সঙ্গীর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার পথে দিল্লির চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন ডাক্তারির ছাত্রী জ্যোতি সিংহ। তাঁর ওপর পাশবিক অত্যাচার চালায় পাঁচ যুবক ও এক কিশোর। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি ৬ জন। জ্যোতির শরীরে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। টেনে বের করে আনা হয় তাঁর শরীরের অংশ। গুরুতর আহত অবস্থায় ১৩ দিন ধরে হাতপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হয় জ্যোতিকে। উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুর। কিন্তু ফিরে আসতে পারেননি ওই ছাত্রী।
ঘটনাকে ঘিরে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। ওঠে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করে ৬ জনকেই। ২০১৩-তে নিম্ন আদালতে শুরু হয় বিচার। সে সময়, নাবালকের বয়স ছিল, ১৭ বছর ৭ মাস। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হতে ৫ মাস বাকি। আইনের চোখে সাবালক না হওয়ায়, তিন বছরের জন্য তাকে পাঠানো হয় হোমে।
কারণ, নাবালক বিচার আইনের ১৫(১) ধারা অনুযায়ী, এই বয়সে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি, বিশেষ রিমান্ড হোমে তিন বছরের বন্দিদশা! শুধুমাত্র সেই কারণেই নৃশংস অপরাধ করেও, মাত্র তিন বছর হোমে কাটিয়ে মিলেছে রেহাই।
নিম্ন আদালতে মামলা চলাকালীন ২০১৩-র মার্চে তিহাড় জেলে আত্মহত্যা করে রাম সিংহ নামে এক অভিযুক্ত। বাকি ৪জনকে ফাঁসির সাজা শোনায় নিম্ন আদালত। রায় বহাল রাখে দিল্লি হাইকোর্ট। তিন বছর পর ছাড়া পায় সেদিনের নাবালক। অথচ পুলিশের দাবি ছিল, ঘটনায় সবথেকে নৃশংস ভূমিকা ছিল ওই নাবালকেরই।
সেই প্রেক্ষিতেই এদিন জ্যোতির মা আশা দেবী বলেন, যে এমন ঘৃণ্য অপরাধ করে, নাবালক বলে তার ছাড় পাওয়া উচিত নয়। নাবালক বলে ধর্ষণ-খুনের মতো অপরাধ করেও মাফ? ধর্ষকের মুক্তি ঘিরে ফের তোলপাড় হয় গোটা দেশ! দাবি ওঠে আইন বদলের।
শেষমেশ, ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর সংসদে পাস হয় নাবালক বিচার আইন সংশোধনী বিল। যার ফলে, খুন, ধর্ষণ, অ্যাসিড হামলার মতো জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে নাবালকের সংজ্ঞা ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ করা হয়। অর্থাৎ জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে ১৬ বছর বয়সী নাবালকের প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই বিচার হবে আদালতে। সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত শাস্তি হবে। তবে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের সংস্থান নেই।
এতদিন ১৮ বছরের কম বয়সী যে কোনও কাউকে নাবালক হিসাবে ধরা হত! এই বয়সসীমার মধ্যে কেউ অপরাধ করলে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি হত তিন বছর। যেমনটা হয়েছিল দিল্লিকাণ্ডের নাবালকের। কিন্তু এবার থেকে তা আর হবে না। জ্যোতির পরিবারের আক্ষেপ, এই কড়া আইন কেন আগে হল না, তাহলে তো আর তিন বছর পরই ছাড়া পেত না নৃশংস অত্যাচারী।