মুম্বই: দীপাবলীর বাজি-পটকা শেষ। ফের শুরু টাটা-সাইরাস গুলি বিনিময়। টাটা গোষ্ঠী অভিযোগ করেছিল, টাটা-ডোকোমো টেলিসার্ভিসের ব্যাপারে তাদের যে ল্যাজে-গোবরে দশা, তার জন্য দায়ী শুধু অপসারিত চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি। যেভাবে তিনি ডোকোমোর বিষয়টি পরিচালনা করেন, তার সঙ্গে টাটা সংস্কৃতির কোনও সম্পর্ক নেই। যেভাবে ব্যাপারটি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা মোকদ্দমা শুরু হয়েছে, রতন টাটা ও বোর্ডের অন্যান্য ট্রাস্টিদের তাতেও সম্মতি ছিল না।

সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সাইরাস দাবি করেছেন, তাঁকে কাঠগড়ায় তুলে টাটা গোষ্ঠী যে অভিযোগ করেছে, তা শুধু মিথ্যেই নয়, বদমায়েশিতে ভরা। টাটা সন্স বোর্ডের অনুমোদন নিয়েই টাটা-ডোকোমো চুক্তি চূড়ান্ত হয়, ওই চুক্তির ব্যাপারে যা যা পদক্ষেপ হয়েছে, সবই বোর্ডের অনুমোদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।

মিস্ত্রির দাবি, তিনি টাটা গোষ্ঠীর এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই জাপানের এনটিটি ডোকোমো সংস্থার সঙ্গে টাটার চুক্তি হয়। তারপর যা যা হয়েছে, সবই হয়েছে টাটা সন্স বোর্ডের পূর্ণ সম্মতি নিয়ে। তিনি একলা কিছু করেননি, সে প্রশ্নও ওঠে না।

২০০৯-এর নভেম্বরে জাপানি সংস্থা এনটিটি ডোকোমো টাটা টেলিসার্ভিসেসের ২৬.৫ শতাংশ শেয়ার কেনে ১২,৭৪০ কোটি টাকার বিনিময়ে অর্থাৎ শেয়ার পিছু ১১৭ টাকা দর দেয় তারা। ঠিক হয়, যদি ৫ বছরের মধ্যে জাপানি সংস্থাটি ওই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যায়, তবে শেয়ার ক্রয়মূল্যের অন্তত ৫০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে তাদের। টাটা-ডোকোমো প্রকল্প লাভের মুখ না দেখায় ২০১৪-র এপ্রিলে ওই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যায় ডোকোমো। ৫ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তারা টাটা গোষ্ঠীর কাছে ৫৮ টাকা প্রতি শেয়ার হিসেবে ৭,২০০ কোটি টাকা দাবি করে।

কিন্তু টাটা গোষ্ঠী জানিয়ে দেয়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইডলাইন অনুযায়ী তারা শেয়ার পিছু ২৩টাকা ৩৪ পয়সার বেশি দিতে অপারগ। কারণ গাইডলাইন বলছে, কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থা তার বিনিয়োগ ছেড়ে বেরিয়ে এলে ইকুইটির ওপর রিটার্নের ভিত্তিতে যে দর ঠিক হয়েছে, তার বেশি পাবে না। জাপানি সংস্থাটি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করলে তাদের পক্ষে রায় দেয় আদালত। টাটাদের নির্দেশ দেয়, এনটিটি ডোকোমোকে ১.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হবে। যদিও টাটা গোষ্ঠীর বক্তব্য, ওই রায় তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়, কারণ তা ভারতীয় আইন বিরোধী।

এখন সাইরাস মিস্ত্রির দাবি, ডোকোমো সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সব তিনি একা নেন, সে ব্যাপারে রতন টাটা সহ অন্যান্য ট্রাস্টির কোনও ভূমিকা ছিল না বলে টাটা গোষ্ঠীর যে দাবি, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। বরং ডোকোমোর পাওয়া চুকিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সম্মতির জন্য তাঁদের সঙ্গেই আবেদন করতে জাপানি সংস্থাটিকে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু তা মানতে চায়নি তারা। আর আরবিআইয়ের অনুমোদন না মেলায় ডোকোমো আন্তর্জাতিক আদালতে যায়।

যদিও মিস্ত্রির সাফাইয়ে কান দিতে রাজি নয় টাটা গোষ্ঠী। তাদের বক্তব্য, মিস্ত্রি অনেক কিছুই কল্পনা করছেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, অতএব এ নিয়ে মন্তব্য করবে না তারা।