নয়াদিল্লি:  রাজ্যসভার সাংসদ এবং তৃণমূলের প্রাথমিক পদে ইস্তফা দিলেন মুকুল রায়। গায়ে সবুজ জ্যাকেট পরে উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুর বাসভবনে যান তিনি। সেখানে গিয়ে তিনি তাঁর ইস্তফাপত্র জমা দেন। হৃদয়ে গভীর যন্ত্রণা নিয়েই এই পদক্ষেপ নিয়েছি, পদত্যাগ পত্রে লেখেন মুকুল। তারপর সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বরে বাংলার সমস্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ডেকে তিনি বলেছিলেন শীঘ্রই তিনি তাঁর রাজ্যসভার সাংসদ পদ এবং তৃণমূলের সদস্য পদ ছেড়ে দেবেন। সেই কথা মতোই আজ তিনি রাজ্যসভার সাংসদ পদ এবং তৃণমূলের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করলেন। হৃদয়ে গভীর যন্ত্রণা নিয়েই তিনি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হয়েছেন বলে সাংবাদিক বৈঠকে জানান মুকুল।

এরপর সাংবাদিক বৈঠকে তৃণূলের জন্মলগ্ন থেকে সেখানে তাঁর ভূমিকা নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেন মুকুল। ১৯৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল। সেখানে তিনিই প্রথম সই করেছিলেন বলে জানান। ওই বছরেরই ২৪ ডিসেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত করা হয়। তারপর মমতা এসে তৃণমূলে যোগ দেন। তিনিই কমিশনকে সেই যোগদানের কথা জানান। সেই সময় সুব্রত বক্সী সরকারি কর্মী ছিলেন। তাই তিনি দলের রেজিস্ট্রেশনের জন্যে আবেদন করতে পারেননি। তবে সে সবই আজ ইতিহাস, সাংবাদিক বৈঠকে মন্তব্য মুকুলের।

১৯৯৮,  বিজেপির হাত ধরেছিল তৃণমূল, আসন সমঝোতার জন্যে। এনডিএ শরিক হিসেবে লড়েছিল তৃণমূল। মমতা রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন। অজিত পাঁজা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন। সেদিন তৃণমূল বলেছিল বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল নয়। ২০০৭ পর্যন্ত এনডিএ ও বিজেপির সঙ্গে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর ইউপিএ-তে যোগদান। টুজি এবং কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারির জেরে ২০১২ সালে ইউপিএ ত্যাগ করে তৃণমূল।

২০১২-১৪ সালে সংসদে তৃণমূল প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ছিল। এরপরই সুর চড়িয়ে মুকুল বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে লড়তেই টিএমসি তৈরি হয়েছিল। তাহলে বারবার কংগ্রেস কেন। কংগ্রেস ছাড়া দেশ চলবে না মনে করলে মার্জার করে দিক।

তারপরই তিনি দল এবং নেত্রী সম্পর্কে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, মমতাকে নেত্রী মনে করি। কমরেড হতে পারি, কিন্তু চাকর নই।

এবার তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখন তিনি ছুটিতে যাচ্ছেন। কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা হওয়ার প্রসঙ্গে মুকুল বলেন, কোনও দর কষাকষি নয়। অরুণ জেটলি-কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। পরবর্তী পদক্ষেপ কী  নেওয়া যায় সেই নিয়েই আলোচনা হয়েছে। মুকুল জানান, রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। অধীর চৌধুরী তাঁর সবচেয়ে ভাল বন্ধু। সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে ভাল যোগাযোগ রয়েছে। তবে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি এখনও নেননি।

সারদা প্রসঙ্গে আজকের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে, তদন্তকারী সংস্থাকে তিনি সাহায্য করতে সবসময় তৈরি। ৮ ঘণ্টা সিবিআইয়ের সঙ্গে তিনি ছিলেন। তাঁর থেকে যা পাওয়ার পেয়ে গিয়েছে গোয়েন্দারা। সেইমতো ৮টি চার্জশিট পেশ হয়েছে।

সাংবাদিক বৈঠকে তিনি মোদী সরকারের হয়ে সওয়াল করে বলেন, দেশের মানুষ মোদীকে ভোট দিয়ে ভুল করেননি।